Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহককে ভোগান্তিতে ফেলছে প্রতারকরা

bkash-appরাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের বাসিন্দা মাসুদ রানা একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। বুধবার সকাল ১০টা ৬ মিনিটে তিনি শনির আখড়ার একটি দোকান থেকে তার গ্রামীণফোনের নম্বরের বিকাশ অ্যাকাউন্টে সাত হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন।

বেলা ১১টা ৫৪ মিনিটে ০১৮৮১২৭১৯৮৩ নম্বর থেকে ফোনে কল পান মাসুদ। মহাখালীর বিকাশের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা জাহিদ হাসান পরিচয় দিয়ে ফোনে ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ, আপনার ভোটার আইডি দিয়ে আরও চারটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট চালানো হচ্ছে। আপনি তিনটি তথ্য দিলে আপনার অ্যাকাউন্ট আবার আমরা চালু করে দেব। না হলে এটি বন্ধ থাকবে।

chardike-ad

ভোটার আইডি কার্ডের নাম, নম্বর ও পিন নম্বর জানতে চান ওই ব্যক্তি। মাসুদ তথ্য দিতে অস্বীকার করলে তিনি বলেন, তথ্য না দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে।

এ পর্যায়ে প্রতারকরা বিকাশের হেল্পলাইনের নম্বর ১৬২৪৭ স্পুফিং (প্রযুক্তির মাধ্যমে হুবহু কোনো নম্বর তৈরি করা) করে কয়েকবার কল দেন। ওই কল রিসিভ করেননি মাসুদ রানা।

এরপরই তিনি বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে দেখেন পিন নম্বর নিচ্ছে না। পিন নম্বর দিলে লেখা উঠছে ‘দ্য অ্যাকসেস চ্যানেল ইজ ডিজ্যাবল ফর দ্য ইউজার’।

পরে বিকাশের হেল্পলাইনে ফোন করলে সেখান থেকে জানানো হয়, অ্যাকাউন্টে পিন নম্বর পরপর তিনবার ভুল দেয়ায় অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গেছে। মালিকানা-সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে পিন নম্বরটি রিসেট করে দেয়া হবে, তখন অ্যাকাউন্ট সচল হবে।

মাসুদ এ পর্যায়ে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বিকাশের ব্যালেন্স, বাবার নাম জানিয়ে পিন রিসেট করে নেন। কিন্তু বিকেল ৩টার দিকে আবারও ০১৮৮১২৭১৯৮৩ থেকে ফোন আসার পর তথ্য চাওয়া হয় এবং না দেয়া হলে মাসুদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন ব্লক হয়ে যায়।

আবারও কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেন মাসুদ। কিন্তু একটি পিন রিসেট করার আট ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে রিসেট করা যায় না বলে জানানো হয় কাস্টমার কেয়ার থেকে। তারা আরও জানান, একইভাবে ভুল পিন নম্বর দেয়ার কারণে পিন ব্লক হয়ে গেছে।

এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন মাসুদ। এর নম্বর-৩৯৮ (৪ জুলাই)।

বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে প্রতারকরা এখন এভাবে বিকাশ অ্যাপ দিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে ফেলছে। বিকাশ অ্যাপে ভুল পিন নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়ে তা খুলে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তথ্য চাইছে প্রতারকরা। কেউ তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্টের অর্থ হারাচ্ছেন। কারও কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে ভুল পিন দিয়ে ব্লক করে দিচ্ছে।

বিকাশ হেল্পলাইনে (১৬২৪৭) কল করে নাম, ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর, বাবার নাম, সর্বশেষ ব্যলেন্সের তথ্য জানিয়ে মালিকানা নিশ্চিত করে নতুন পিন নম্বর নিয়ে অ্যাকাউন্ট সচল করতে হচ্ছে গ্রাহককে। কেউ কোনো একটি তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে ফিরে পাচ্ছেন না অ্যাকাউন্টটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো ব্যবস্থায় (ইউএসএসডি-আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা) বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা সিম ছাড়া পিন ব্লক করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ যে কারও অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। একই সঙ্গে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে বিকাশ অ্যাপ।

বিকাশের গ্রাহক মো. শাহাদাত জামান বলেন, ‘কেউ আমার বিকাশ আকাউন্টের তথ্য চাইবে, না দিলে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেবে। এটা কেমন কথা! এটা কিন্তু ঘটছে। আমি ভোগান্তিতে পড়েছি। বিকাশ অ্যাপটি গ্রাহক ভোগান্তিবান্ধব মনে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে এটা নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করা উচিত।’

আরেক গ্রাহক মিজানুর রহমান বলেন, ‘টাকা হাতিয়ে নিতে না পারলেও আমার পিন নম্বরও ব্লক করে দিয়েছে প্রতারকরা। আমি পিন রিসেট দিতে হেল্পলাইনে ফোন করেছি, সব তথ্য দিতে আমার মোট ১১ মিনিট ৫০ সেকেন্ড লেগেছে। খরচ হয়েছে ২৯ টাকা। হেল্পলাইনে কথা বলতে প্রতি মিনিটে খরচ হয় আড়াই টাকা, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কোনো অপরাধ নেই, তারপরও অ্যাকাউন্ট ব্লক। অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে মোবাইলের টাকা খরচ করে আমাকে ফোন করে মালিকানা নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এটা তো ভোগান্তির ওপর ভোগান্তি। বিকাশের সেবা গ্রাহকবান্ধব না হলেও বাধ্য হয়ে বিকাশ ব্যবহার করি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাহক ভোগান্তি নয় বরং গ্রাহকের নিরাপত্তার স্বার্থেই অ্যাকাউন্টটি সাময়িক স্থগিত করা হয়। বিকাশ লেনেদেনে গ্রাহকের নিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। সঠিক পিন ব্যবহার ব্যতীত বিকাশে কোনো ধরনের লেনদেন সম্ভব নয়। বিকাশ অ্যাপ অথবা ইউএসএসডি ব্যবহার করে লেনদেনের ক্ষেত্রে পরপর কয়েকবার ভুল পিন দিয়ে অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে গ্রাহকের নিরাপত্তার স্বার্থেই অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সাময়িক স্থগিত হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকাশ অ্যাপের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরে অ্যাকাউন্টটি পুনরায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সক্রিয় হয়ে যায়। তবে ইউএসএসডির ক্ষেত্রে ১৬২৪৭ হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে সঠিক মালিকানার প্রমাণ করে অ্যাকাউন্ট পুনরায় সচল করতে হয়।’

সৌজন্যে- জাগো নিউজ