দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা বিপুল পরিমাণ কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার পর জ্বালানি সংকটে পড়েছে কয়লা খনির পাশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। প্রয়োজনীয় কয়লা না থাকায় সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে তিনটি ইউনিটে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার অভাবে দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়। ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হওয়ার পর কয়লা সংকটে ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আট জেলায়।
এদিকে, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কয়লা গায়েবের ঘটনায় কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করেছে। এ ঘটনায় আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পেট্রোবাংলা।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেছেন, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কয়লা সরবরাহ করতে না পারায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। রোববার থেকে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যায়। যার বর্তমান বাজার মূল্যে ২২৭ কোটি টাকার ওপরে।
এদিকে, কয়লা খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করে পেট্রোবাংলায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোম্পানি সেক্রেটারি ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে তাৎক্ষণিক বদলি করে সিরাজগঞ্জে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত কর্মকর্তারা হলেন- আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) ও খালেদুল ইসলাম উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর)।
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব
বিসিএমসিএল’র একজন কর্মকর্তা জানান, দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই চারজনের বিরুদ্ধে এখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী, খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লা যেখানে স্তূপ করে রাখা হয় সেখানে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা মজুদ থাকার কথা ছিল। অথচ সেখানে এখন এক টন কয়লাও নেই বলে জানান কোম্পানির আরেকজন মহাব্যবস্থাপক। প্রতি টন কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২২৭ কোটি টাকার কয়লার কোনো হদিস নেই।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অদূরে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাকিম বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে চালাতে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাময়িকভাবে কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় ও মজুত ফুরিয়ে আসায় ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সোমবার থেকে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি।