Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বিমান

bangladesh-bimanবাড়ছে বিমানের আকাশ। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আন্তর্জাতিক নতুন ১২টি রুটে ডানা মেলবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ। সেগুলো ঢাকা-গুয়াংজু, ম্যানচেস্টার, মন্ট্রিয়ল, হংকং, দিল্লি, মদিনা, কলম্বো, মালে, টোকিও, সিডনি, রোম ও টরন্টো রুটে চলাচল করবে। নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে এসব রুটে ফ্লাইট চালাবে বিমান। ইউরোপসহ দূরপাল্লার বন্ধ হয়ে যাওয়া লাভজনক রুটগুলো চালু করারও উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক নতুন ১২টি রুটে পাখা মেলার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমান সূত্র জানায়, ছোট হয়ে পড়া বিমানের আকাশ আবারও বড় হচ্ছে। এক সময় ২৭টি আন্তর্জাতিক রুটে চলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নানা সংকটে বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। বিমান নতুন আরও ১২টি রুট বাড়িয়ে আগের সেই লাভজনক ২৭ রুটে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ী নতুন চারটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাতে বিশ্বের ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিমানের।

chardike-ad

বর্তমানে বিমান বহরে রয়েছে ১৬টি উড়োজাহাজ, যার সাতটি নিজস্ব। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ এবং একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার। বহরে থাকা অন্য নয়টি উড়োজাহাজ লিজে আনা। আগামী ২৯ নভেম্বর বিমান বহরে যোগ দেবে ড্রিমলাইনার ৭৮৭ হংস বলাকা। ওয়াটার স্যালুট দিয়ে নতুন এ উড়োজাহাজকে বরণ করবে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এর আগে গত আগস্টে বিমান বহরে যোগ দেয় ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আসবে রাজহংস ও গাঙচিল নামে আরও দুটি ড্রিমলাইনার।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে বসে ইন্টারনেটের সাহায্যে ডিজিটাল যুগের বার্তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। উড়োজাহাজে বসে অফিসিয়াল কাজ করা যাবে। প্রয়োজনে টেলিফোনে কথাও বলা যাবে। হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও পরিবার থাকবে মুঠোর মধ্যে। ৪৩ হাজার মিটার উচ্চতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা সিটে বসে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। যোগাযোগ রাখতে পারবেন পুরো ডিজিটাল দুনিয়ায়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইফতেখার আলম বলেন, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি হালকা যৌগিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। ফলে সবচেয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত এ উড়োজাহাজ। বোয়িং ৭৮৭ ও ৭৬৭ এর চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী ড্রিমলাইনার। এ উড়োজাহাজের ওজনও কম। ড্রিমলাইনার একবার তেল নিয়ে একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়াতে সক্ষম। উড়োজাহাজের ভেতরের এই আবহে বিমানযাত্রীরা কিছু কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। দীর্ঘ যাত্রায় আরোহীদের ক্লান্তি অনুভব হবে না। মুখ ও চোখ শুকিয়ে যাওয়া কিংবা মাথাব্যথা হবে না। উড়োজাহাজের ককপিট পেপারলেস। পাইলটরা আইপ্যাড ব্যবহার করে উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, ঢাকায় বিমানের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ড্রিমলাইনারের যোগাযোগ থাকবে সার্বক্ষণিক।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ড্রিমলাইনার শিগগিরই বহরে যুক্ত হচ্ছে। এ উড়োজাহাজ দিয়ে নতুন ১২টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বিমান আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইট বাড়ানোর মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে। লোকসানের অপবাদ থেকে লাভের মুখ দেখবে। বিশ্বের নামি-দামি বিমান সংস্থার সঙ্গে সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিমান এগিয়ে যাবে। ভ্রমণও হবে আনন্দময়। তিনি আরও বলেন, নতুন ড্রিমলাইনারগুলো প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এ বিমানে যাত্রীরা নানা ধরনের সেবা পাবেন। সরকারের ডিজিটাল যুগের সঙ্গে মিল রেখে বিমানেও ডিজিটালের ছোঁয়া লাগছে। ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় কার্বন নিঃসরণ কম হবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভূমিকা রাখবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, বিমানের নতুন ড্রিমলাইনারগুলো সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশেরও একটা প্রতিচ্ছবি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে লাভজনক এবং এর যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো চালু করা হচ্ছে। আগামীতে যাতে বিমানের যাত্রীসেবা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয় মাথায় নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়। তিনি বলেন, ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে আন্তর্জাতিক রুট বাড়ানো ও ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারলে বিমান দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে।

সৌজন্যে- সমকাল