মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন
শেয়ার

দেশের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মংলায়


সিউল, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪:

মংলায় দেশের প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ২০৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে ৪৭ কোটি টাকা সুদবিহীন ঋণ অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিগগিরই জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জানা গেছে, দ্রুত শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সুপারিশে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বেজার গভর্নিং বোর্ডের প্রথম বৈঠকেই অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো হলো— চট্টগ্রামের আনোয়ারার গহিরা ও মিরসরাইয়ে দুটি এবং মৌলভীবাজারের শেরপুর, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু সংলগ্ন এলাকা ও বাগেরহাটের মংলা।

logoবাগেরহাটে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০৫ একর অব্যবহূত জমি রয়েছে। এ জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। গত ডিসেম্বরে এজন্য সুদবিহীন ঋণ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বেজা। গত ৭ জানুয়ারি এ ঋণ অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিগগিরই বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, মংলায় জমি অধিগ্রহণে সুদবিহীন ঋণ মঞ্জুর করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিগগিরই জমি হস্তান্তর হবে। এরপর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে।

বেজার তথ্যমতে, মংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য ডেভেলপার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আগ্রহপত্র (ইওআই) আহ্বানের পর দুটি প্রতিষ্ঠান কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে আর্থিক প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে নিয়োগ করা হবে। এরপর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বেজার জমি ইজারা নিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করবেন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে সিরাজগঞ্জে দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জমি নিতে যাচ্ছে বেজা। এক্ষেত্রে ৯৮০ একর জমি হস্তান্তরে ১১৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এটি উন্নয়নে আগ্রহপত্রে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বর্তমানে তা মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। আর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬ হাজার ৬১৫ একর ও আনোয়ারার গহিরায় ৬১১ একর এবং মৌলভীবাজারের শেরপুরে ৩৫৩ একর জমিতে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। চলতি মাসে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এ তিনটির জমি অধিগ্রহণে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা দরকার হবে।
অন্য জেলায়ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান ও জমির পরিমাণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বেজা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে, নীলফামারী সদর উপজেলা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও মানিকগঞ্জের পুরনো আরিচা ফেরিঘাটে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতার কথা জানিয়ে চিঠি দেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। বেজার পরবর্তী গভর্নিং বোর্ডের সভায় এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
বেসরকারিভাবে বিজিএমইএ মুন্সীগঞ্জে ও একে খান অ্যান্ড কোম্পানি নরসিংদীতে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে বেজায়। এ-সংক্রান্তও বেজার পরবর্তী গভর্নিং বোর্ডের সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এছাড়া আরো ১২টি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।

বেজার সচিব মোহাম্মদ আবদুুস সামাদ বলেন, পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বেজা। অন্য জেলায়ও আরো কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রাথমিক কাজ চলছে। বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এসব কর্মকর্তার বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে। সদস্য হিসেবে আছেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব, পিপিপি কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও টাস্কফোর্সের সদস্য আরস্তু খান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে টাস্কফোর্স।

প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি খাত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ১২ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্য দাতা সংস্থা ডিএফআইডি এ প্রকল্পে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সূত্রঃ বণিকবার্তা।