Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া’র কাছে প্রত্যাশা

সিউল, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪:

প্রবাসে এখন প্রায় কোটি বাংলাদেশী। জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ। সংখ্যা অনুপাতে কোরিয়াতে বাংলাদেশী প্রবাসীর সংখ্যা অনেক কম। কোরিয়া ইমিগ্রেশনের হিসেব অনুযায়ী বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ১৪ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু দুই দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং কোরিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে কোরিয়া বাংলাদেশের কাছে সেই তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

chardike-ad

কোরিয়াতে প্রবাসীদের কোন একক সংগঠন ছিল না। কোরিয়ান সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেত না বাংলাদেশী প্রবাসীরা। সরকারী পর্যায়ে লবিং এবং দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে শক্তিশালী কমিউনিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইপিএস কর্মীরা যোগ্যতা, সুনামের সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীরা সবসময় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে চলছে। এককথায় কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের অবস্থান অনেক ভাল। দরকার ছিল একটি শক্তিশালী কমিউনিটির। আশা করি বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে) কোরিয়া প্রবাসীদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করবে।

btffআমাদের প্রত্যাশাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিসিকের নির্বাচন। কোরিয়াতে যারা রাজনীতি করেন তাদের বেশিরভাগই সেদিন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সব রাজনৈতিক নেতা, সাধারণ প্রবাসী সবাই একজোট এই সংগঠন হবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। যেখানে সব জায়গায় একটি একক বড় সংগঠন করতে গেলেই রাজনীতি চলে আসে সেখানে কোরিয়ার সবচেয়ে বড় সংগঠনটি হলো রাজনীতিবিদদের হাতেই অরাজনৈতিকভাবে। আমরা আশাবাদী এই সংগঠনটি পরিচালিত হবে বাংলাদেশী প্রবাসীদের স্বার্থে। কোন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তির স্বার্থে নয়।

নতুন এই কমিটির কাছে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরছি।

ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা। কোরিয়ায় এখনো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক ভাল। পরবর্তীতে যারা কোরিয়া আসবেন তাদের জন্য সুন্দর ইমেজ তৈরী করার দায়িত্ব এখন যারা আছেন তাদের। বিসিকে চাইলে এই দায়িত্ব পালন করতে পারে। ইমেজ তৈরীর জন্য যা যা করা যেতে পারে তার কয়েকটা লিখছি। সিউলসহ কোরিয়ার শহরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভালগুলোতে অংশ নেওয়া। কোরিয়ান মিডিয়ায় পজিটিভ প্রচারণা চালানো, বাংলাদেশের সাংস্কৃতি নিয়ে ফেস্টিভালের আয়োজন করা এবং কোরিয়ানদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যেসব কোরিয়ান বাংলাদেশে ব্যবসা করে, চাকরি কিংবা একসময় বাংলাদেশে বসবাস করতেন তাদেরকে নিয়ে বাৎসরিক একটি ভোজের আয়োজন করা যেতে পারে। কারণ তারা বাংলাদেশের ইমেজ যেভাবে কোরিয়াতে তুলে ধরবেন কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে সেভাবে জানবে।

বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় সবচেয়ে ভাল একটি প্রচারণা চালানো যেতে পারে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী আছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ফেস্টিভালের আয়োজন, বাংলা মুভি প্রদর্শন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ফেস্টিভালের আয়োজন করে সেখানে একটু ভাল পরিসরে অংশগ্রহণ করা। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে কোরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীরা এখন নিজেরাই ব্র্যান্ড। কোরিয়াতে ৯৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনা করতে এসেছে স্কলারশীপ নিয়ে এবং যারা মাস্টার্স পিএইচডি করছেন তাদের বিশাল অংশ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ইপিএস কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো

বিসিকে’র সবসময় ইপিএস কর্মী ভাইদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কোরিয়ায় বাংলাদেশী প্রবাসীর প্রায় ৮০ শতাংশই ইপিএস কর্মী। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোরিয়ায় আসার কারণে ইপিএস কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকেন। ভাষা নিয়ে সমস্যা, কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বেতন না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে ইপিএস কর্মীদের অনেক কষ্টের লাগব হবে। ইপিএস কর্মীদের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফোন নাম্বার দিয়ে সেবা দেওয়া যেতে পারে। তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে না পারলেও যারা ফোন করবেন তাদের সমস্যা শুনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে জেনে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইপিএসে বাংলাদেশ কোটা কিভাবে বাড়ানো যায় তার জন্য লবিং কিংবা অন্য যেসব উপায় আছে তা বের কর কাজ করতে পারে।

বিবিধ সমস্যা

কোরিয়ায় প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ দূতাবাসে লোকবলের অভাব এবং অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একটা উদাহরণ দিই। পাসপোর্ট নবায়ন করতে কোরিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে দূতাবাসে আসেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত পাসপোর্ট জমা নেওয়া এবং বিকাল ৪টার পর প্রদানের নিয়ম থাকায় সবাইকে ৪/৫ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কোরিয়াতে ইমিগ্রেশনে ভিসা নবায়ন করাসহ অন্যান্য সরকারী কাজগুলোও তাৎক্ষণিকভাবে করা যায়। বাংলাদেশ দূতাবাস যদি কোরিয়ানদের মত দ্রুত সেবা দিতে পারত তাহলে প্রবাসীরা অনেক বেশি উপকৃত হত। বিসিকে দূতাবাসের সাথে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধান করতে পারে।

কোরিয়ান সরকারের নিয়ম কড়াকড়ি হওয়ায় কোরিয়ায় প্রবাসীদের খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়না। বিসিকে আন্তরিকভাবে চাইলে ছোট ছোট যেসব সমস্যা আছে সেসবও সমাধান করতে পারে। বিসিকে’র ও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে এবং থাকবে। একটু আন্তরিক হলে এইসব সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। কোরিয়া প্রবাসীদের জয় হোক। বিসিকে’র পথ চলা শুভ হোক।

সরওয়ার কামাল, সম্পাদক, বাংলা টেলিগ্রাফ।