Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পার্সেল খুলে ছবি নিয়ে পাঠাও চালকের অন্যরকম প্রতারণা

nahid-sajidরাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা রহমান (ছদ্মনাম)। গত ২০ জানুয়ারি হঠাৎ সানজিদা দেখেন তার ছবি ব্যবহার করে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মেসেঞ্জারে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠানো হয়েছে। তিনি তা গ্রহণ করেন। পরে ওই আইডি থেকে সানজিদার কিছু ‘প্রাইভেট ছবি’ মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তার কাছে ১২ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ওই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। উপায়ান্ত না দেখে সানজিদা প্রথমে তাদের দেওয়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। বাকি টাকা পরিশোধ করতে কিছুটা সময় চান তিনি। তবে তারা ছিল নাছোড়বান্দা। দ্রুত টাকা না দিলে ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয় আবারও। এরপর বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করেন সানজিদা। হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন তিনি। পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ওই তদন্তে যা উঠে এসেছে, তা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

তদন্তের শুরুতেই পুলিশ সানজিদার ছবি নিয়ে যারা প্রতারণা করছিল, তাদের ধরতে গোয়েন্দা ফাঁদ পাতে। সানজিদার মাধ্যমে ওই চক্রের সদস্যের যোগাযোগ করানো হয়। বাকি টাকা দেওয়ার বিনিময়ে ফেরত চাওয়া হয় সানজিদার প্রাইভেট ছবি। এতে রাজিও হয় তারা। ফের একটি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের নম্বর দেয় ওই চক্র।

chardike-ad

এরই মধ্যে পুলিশ ওই নম্বর কোন জায়গায় ব্যবহার করা হয়, তার ঠিকানা সংগ্রহ করে। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওই এজেন্ট নম্বরটি মিরপুরে ব্যবহার করা হয়। এরপর গত বুধবার সাদা পোশাকে পুলিশের একটি দল ওই এজেন্টের দোকানের পাশে গিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান নেয়। পুলিশের আরেকটি দল ওই নম্বরে টাকা পাঠালে তা তুলতে যায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। এরপর তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারের পর জানা যায়, ওই দুই প্রতারকের নাম সাজিদুর রহমান (১৯) ও নাহিদুল ইসলাম (১৯)। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-এর চালক সাজিদুর। আর নাহিদুল তার বন্ধু। তবে পাঠাও থেকে পার্সেল সার্ভিসের কল এলে মাঝেমধ্যে সাজিদুর রিসিভ করার পর তার বন্ধু নাহিদুল মোটরসাইকেলে তা গন্তব্যে পৌঁছে দিত। সাজিদুর ঢাকা কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের ছাত্র। আর নাহিদুল মিরপুরে একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করে।

সম্প্রতি তারা পাঠাও-এর একটি পার্সেল নিয়ে মিরপুর থেকে হাতিরঝিলের একটি ঠিকানায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পার্সেলটি খুলে তা উল্টেপাল্টে দেখে তারা। ওই সময় পার্সেলে একটি মোবাইল সেট পায়। তাৎক্ষণিকভাবে সেটটি চালুর পর সেখানে এক নারীর বেশ কিছু ‘প্রাইভেট ছবি’ দেখতে পায়। মোবাইল ফোন থেকে তারা ওই নারীর ফেসবুক আইডিও বের করে। এরপর দ্রুত ব্লুটুথের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও নিজেদের মোবাইলে নিয়ে নেয়। পরে পার্সেলটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। পরে ওই নারীর ছবি ব্যবহার করে দুটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে সাজিদুর ও নাহিদুল। এরপর তার ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ছবি ভাইরাল করার হুমকি দেয় তারা।

তদন্তে উঠে এসেছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া ওই তরুণী সম্প্রতি তাদের হাতিরঝিলের বাসা থেকে বেড়াতে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেই বাসায় একটি মোবাইল সেট ভুলে ফেলে আসেন। পরে তার ওই আত্মীয় মোবাইল সেটটি পাঠাও-এর পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে তরুণীর বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে পার্সেল খুলে পাঠাও-এর এক চালক ও তার বন্ধু তরুণীর ছবি পেয়ে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মেসেঞ্জারে নিজের ‘প্রাইভেট ছবি’ দেখার পর ওই তরুণীর ধারণা ছিল, হয়তো সম্প্রতি হারানো তার একটি মোবাইল সেট কারও হাতে পড়ায় সেখান থেকে ছবি পেয়েছে কেউ। তবে আত্মীয়ের বাসায় ফেলে আসা মোবাইল ফোন থেকে পার্সেল সার্ভিসের কেউ এভাবে তার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতবে- এটা তার কল্পনারও বাইরে ছিল।

এ ব্যাপারে সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, যেভাবে পার্সেল সার্ভিসের সঙ্গে জড়িতরা তরুণীকে ফাঁদে ফেলেছে, তা খুবই অভিনব। এ ধরনের ঘটনায় আগামীতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের ওয়েবসাইট অ্যান্ড ই-মেইল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার সাইদ নাসিরুল্লাহ বলেন, জড়িত পাঠাও-এর এক চালকসহ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছে। তাদের কম্পিউটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগেও তারা এ ধরনের কোনো অপরাধে জড়িত ছিল কি-না, তাও দেখা হবে।

এ ব্যাপারে পাঠাও-এর লিড মার্কেটিং অফিসার সৈয়দা নাবিলা মাহমুদ বলেন, পাঠাও-এর কোনো সদস্য এ ধরনের অপরাধে জড়ালে তার দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। পুলিশ তদন্তে সহায়তা চাইলে তা করতে প্রস্তুত পাঠাও কর্তৃপক্ষ।

সৌজন্যে- সমকাল