Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দেনমোহরের ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল মিতুর উদ্দেশ্য

akash-mituগত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচিত সংবাদ; স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীর আত্মহত্যা। দীর্ঘ নয় বছর প্রেম, অতঃপর বিয়ে তবু কেন চিকিৎসক আকাশের এমন করুণ পরিণতি হলো, এ বিষয়ে নানা প্রশ্নে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। সমাজে একজন চিকিৎসকের মূল্য অনেক। আর পারিবারিক দ্বন্দ্বে এভাবে একজন তরুণ চিকিৎসকের আত্মহনন মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

সংবাদ মাধ্যমের খবর, স্ত্রী মিতুকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন আকাশ। যে কারণে একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে জেনেও মিতুকে বিয়ে করেছিলেন আকাশ। সব ভুলে সংসার শুরু করেছিলেন তিনি। বিয়ের পরপরই জানতে পারেন, নিজের চারিত্রিক অবস্থান থেকে একটুও ফেরেননি মিতু। এটা জানার পরেও ৯ বছর চাপা ক্ষোভ, কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছিলেন আকাশ।

chardike-ad

অবশেষে এতো কষ্টের বোঝা আর বইতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ৫টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন ডা. আকাশ। সেই স্ট্যাটাসে তার আত্মহত্যার জন্য সম্পূর্ণরুপে দায়ী করেন স্ত্রী মিতুকে। পাশাপাশি শ্বশুর শাশুড়িকেও দায়ী করেন তিনি।

এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই যাতনা কেন আকাশ নয়টি বছর বয়ে বেড়ালেন? মিতুকে তালাক দিয়েই তো অন্যভাবে জীবন শুরু করতে পারতেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার এই চিকিৎসক। তখনই যে কথাটি উঠে আসে তাহলো সমাজে দেনমোহর নিয়মের অপব্যবহার।

এ ঘটনায় সমাজ বিশ্লেষকদের মত, ধর্মীয় এই রীতির অপব্যবহারের বলি হয়েছেন আকাশ। বিশ্লেষকের এই মতের সঙ্গে মিলে যায় গ্রেফতারকৃত স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর স্বীকারোক্তি। আকাশের সঙ্গে সংসার করার তেমন কোনো ইচ্ছা ছিলনা তার।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় মিতুকে তার খালাতো ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পুলিশি জিজ্ঞাসায় মিতু জানান, পরিবারের চাপ আর স্বামীর প্রচণ্ড ভালোবাসায় অনেকটা করুণা করে আকাশকে ডিভোর্স দেননি তিনি।

এ বিষয়ে ডা. আকাশের এক আত্মীয় বলেন, ‘বিয়ের পর মিতুকে নিয়ে সুখে ছিল না আকাশ। আমেরিকার কৃষ্টি-কালচারে আসক্ত ছিল মিতু। বিয়ের পর মিতুর অবাধ মেলামেশা আকাশকে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছিল। তবু আকাশ মিতুকে ডিভোর্স দিতে পারছিল না। কারণ তার মাথার ওপর ছিল কাবিননামার ৩৫ লাখ টাকার চাপ।

মিতুকে ডিভোর্স দিলে আইন অনুযায়ী কাবিনের এতো বড় পরিমাণের অর্থ পরিশোধ করতে হতো আকাশকে। সেটা দিতে পারছিল না বলেই মিতুর বেপরোয়া স্বভাব চরিত্র এবং চালচলন বাধ্য হয়ে মুখ বুঝে মেনে নিয়েছিল আকাশ। এমনটাই জানালেন আকাশের ওই আত্মীয়। তিনি অভিযোগ করেন, আকাশের কাছ থেকে ডিভোর্স নিয়ে সেই ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল মিতুর উদ্দেশ্য।

এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসলে এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া হয় আলেম সমাজের।

মোটা অংকের মোহর এখানে বড় একটি বাধা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার রিসার্চ ফেলো ও শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ইসলামে মোহরের ক্ষেত্রে যে সুন্দর নির্দেশনা রয়েছে। অনেক বড় অঙ্কের মোহর ধার্য করা যেমন শরীয়তে কাম্য নয়, তেমনই তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত নয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কিরামের সাধারণ রীতি এ ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ।’

বিবাহের মোহর ও তালাক প্রসঙ্গে ড. মুশতাক আহমদ বলেন, ‘বিবাহ যেহেতু মানবজীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ, তাই ইসলামে বিবাহের বিষয়টি খুবই সহজ করা হয়েছে। বিবাহের খরচসহ যাবতীয় বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে সামাজিক বিশৃঙ্খলা এতোটা প্রকট হতো না। ’