সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায় ‘ছেলেধরা’ গুজবে পিটিয়ে হত্যা করা নারীর পরিচয় মিলেছে। ঘটনার চারদিন পর নিহত নারীর নাম সালমা বেগম (৪০) বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। নিহত সালমা বেগম মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার মুসলিমাবাদ গ্রামের বিল্লাল বেপারীর মেয়ে। তিনি ‘ছেলেধরা’ ছিলেন না। সন্তানদের দেখতে এসে গুজবে লাশ হলেন। বুধবার সাভার ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন নিহতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সালমা বেগমের চাচা কোহিনূর ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজি সালমার সঙ্গে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ১০-১২ বছর আগে মিজানুর ভাতিজিকে ডিভোর্স দিয়ে আবারও বিয়ে করে। সালমা ও মিজানুরের ঘরে তিন মেয়ে আছে। দ্বিতীয় বিয়ের পর তিন মেয়ে মিতা, মনিকা ও মিসকাতকে নিজের কাছেই রেখে দেয় মিজানুর। ডিভোর্সের পর থেকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার মুসলিমাবাদ গ্রামে বাবার বাসায় থাকতো সালমা। মাঝে মধ্যে মেয়েদের দেখতে মিজানুরের বাড়ি যেত। সাভারে এলে ব্যাংক কলোনি এলাকায় আমার বাড়িতেও আসতো সালমা।
কোহিনূর ইসলাম বলেন, মেয়েদের দেখতে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকায় গেলে সালমাকে মারধর করতো মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও স্বজনরা। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আগেও সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ২০-২৫ দিন আগে মিজানুর বিদেশ থেকে সাভারের ইমান্দিপুরের নিজ বাড়ি আসে। ২০ জুলাই (শনিবার) ভোরে বাবার বাড়ি থেকে ইমান্দিপুরে মিজানুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয় সালমা। সোমবার বিকেলে সালমাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এরই মধ্যে বিষয়টি পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আমরা। মিজানুর ও তার স্বজনরা সালমাকে ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণপিটুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন বলেন, তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম সালমা বেগম। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। শনিবার দুপুরে তেঁতুলঝোড়া এলাকায় বাসাভাড়া নিতে গিয়েছিলেন সালমা।
নিহত সালমা বেগমের চাচা কোহিনূর ইসলামের অভিযোগের বিষয়ে এমারত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের স্বামী মিজানুরের বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি। ফলে এ ঘটনায় স্বামীর সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়।
ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধারের দিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি ওই নারী বাসা খুঁজতে তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে প্রথমে ফারুক নামের একজনের বাসায় যান ওই নারী। পরে ওই এলাকার সাবেক মেম্বার সোলায়মানের বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে লোকজন তাকে ‘ছেলেধরা’ গুজবে আটক করে। পরে একই বাড়ির সামনের দোকানে ওই নারীকে গণপিটুনি দেয় উৎসুক জনতা।
খবর পেয়ে আমি তেঁতুলঝোড়া কলেজের পাশ থেকে গুরুতর অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। তবে পরবর্তীতে সোলায়মান মেম্বার ও ফারুকের বাসায় গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফএম সায়েদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। এটি ‘ছেলেধরা’ নয়, গুজবের কারণে ওই নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।