Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেলো শাপলার, কোরিয়া থেকে স্বামী ফিরছেন আজ

saplaস্ত্রী শারমিন আক্তার শাপলার (৩২) সম্মতি নিয়েই উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যান আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক। এ সময়টা যেন একাকিত্বে না কাটে সেজন্য স্ত্রীকে ৩০ জুলাই শ্বশুরবাড়ি জয়পুরহাটে পাঠিয়ে দেন।

গ্রামের বাড়িতে গিয়েই জ্বরে আক্রান্ত হন শাপলা। ডেঙ্গুর কারণে দ্রুতই রক্তের প্লাটিলেট আর প্রেসার কমতে থাকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য জয়পুরহাট থেকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু এ হাসপাতালে ভর্তি করেও বাঁচানো যায়নি ৩১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা শাপলাকে।

শাপলার দুলাই ভাই আনিসুর রহমান বলেন, গাইনি পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল মেয়ে সন্তানের বাবা-মা হচ্ছেন নাজমুল-শাপলা। এ নিয়ে ওদের আনন্দ ও হাসিখুশির শেষ ছিল না। তবে হঠাৎ ট্রেনিংয়ের সুযোগ মেলায় স্ত্রী শাপলার অনুরোধেই বিদেশ যান নাজমুল। ডেঙ্গুতে যখন জীবন সংকটাপন্ন তখনও স্বামীকে তা জানাতে নিষেধ করেন শাপলা।

শাপলা বলেছিলেন, ওকে জানালে দুশ্চিন্তা করবে। ট্রেনিং ছেড়ে ফিরে আসতে পারে দেশে। তাহলে ওর অনেক দিনের প্রত্যাশার সুযোগটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার কিছু হবে না। কিন্তু শাপলা আমাদের ছেড়ে চলেই গেল। শুধু কী শাপলা! সঙ্গে অনাগত শিশুটিও রয়ে গেল অনাগতই। এর চেয়ে আর কষ্ট কী হতে পারে! আমরা নাজমুলকে কী জবাব দেব ভেবে পাচ্ছি না।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৯ বছর আগে জয়পুরহাট পৌর শহরের শান্তিনগর এলাকার মৃত আব্দুস সালামের মেয়ে শাপলার সঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ননুজ গ্রামের নাজমুল হকের বিয়ে হয়। স্বামী নাজমুল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী পরিচালক। তাদের ছেলে সাকিব (৭) শেরেবাংলা বয়েজ স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে।

saplaনাজমুল বিদেশ যাওয়ার পরদিনই জ্বর আসে শাপলার। শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুর থেকেই শাপলার জ্বর শুরু হলে তাকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও ডায়াবেটিস থাকার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার ভোরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ফাতেমা আশরাফ বলেন, ক্রিটিক্যাল অবস্থায় এক অন্তঃসত্ত্বা রোগী আসছে এটা আগেই জেনেছিলাম। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু আমাদের এখানে ভর্তি করতে করতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। এখানে প্রথমে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তার ডেঙ্গু লাস্ট স্টেজে চলে গিয়েছিল। সঙ্গে ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। ডেঙ্গুর কারণে ইন্টারনাল ব্লিডিংও শুরু হয়। অনেক চেষ্টা করেছি, বাঁচাতে পারিনি। অন্তত অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে পারলে মা হিসেবে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।

এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা বার বার অনুরোধ করছি, ক্রিটিক্যাল অবস্থা তৈরির আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কার্যকরী চিকিৎসার ব্যবস্থাগ্রহণ করুন। ডেঙ্গুকে অবহেলা করবেন না। ওই অন্তঃসত্ত্বা মাকে হারানো অনেক বেদনার। তবে এটা আমাদের সবার জন্য একটা ম্যাসেজও।’

মুঠোফোনে শাপলার বড় ভাই জহুরুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, ‘এখনও ঘোরের মধ্যে আছি। তরতাজা হাসিখুশি মেয়েটা আমাদের মাঝে নেই, তা ভাবতেই পারছি না। অনাগত সন্তানকে নিয়ে পাড়ি জমালো ওপারে।’

তিনি বলেন, ছোট ভাই জুয়েল শাপলার অসুস্থতার কারণে শুরু থেকে ওর সঙ্গেই ছিল। বড় বোনের মৃত্যুর মধ্যেই ছোট ভাই জুয়েলও জ্বরে আক্রান্ত হলো। পরীক্ষার পর জানা গেল জুয়েলও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সোহরাওয়ার্দীতে এখন ওর চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে বড় বোন শাপলার জানাজা দাফনের ব্যবস্থা করছি। এর চেয়ে আর কী কষ্ট হতে পারে?

তিনি আরও বলেন, জোহরের নামাজের পর আবহাওয়া অধিদফতর অফিসে একটা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রাত ১০টায় দেশে ফিরছে শাপলার স্বামী নাজমুল হক। এরপর ঢাকা থেকে রাতেই নওগাঁয় ফিরে সকালে দাফন করা হবে শাপলার মরদেহ।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email