Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন পাবনার সাব-রেজিস্ট্রার ইব্রাহীম আলী

pabna-sub-registrerঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার। অবশেষে পাবনা সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইব্রাহীম আলীকে (৫৮) গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার বিকেলে পাবনা সদরের প্রধান ডাকঘর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ইব্রাহীম আলী পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত ইরাদ আলী সেখের ছেলে। ইব্রাহীম আলী পাবনা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। ঢাকায় তার আবাসিক ঠিকানা রয়েছে। সেটি হলো, ৯/৪, টোলারবাগ (দোতলা), মিরপুর-ঢাকা।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ গোলাম মাওলার নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানোর জন্য পাবনার সিনিয়র স্পেশাল জজ ও দায়রা জজ আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তাকে পাবনা জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

chardike-ad

দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বলেন, মো. ইব্রাহীম আলী ২০০৯ সালে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরিতে যোগ দেন। এখন পর্যন্ত ওই পদে কর্মরত তিনি। সরকারি চাকরির নয় বছরে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। আয়বহির্ভূতভাবে দুই কোটি ৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৯২৫ টাকা অর্জন করেছেন ইব্রাহীম। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে এসব সম্পদ করেছেন তিনি।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, নিজের নামে ঢাকায় ৯০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার মূল্য ৪০ লাখ টাকা।

ঈশ্বরদী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে ১৭০৯ বর্গফুটের দোতলা বাড়ি নির্মাণে ব্যয় করেছেন ৬৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। রামচন্দ্রপুর মৌজায় ০.০৮০০ একর জমি এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। বহরপুর মৌজায় ০.০৩০০ একর জমি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। শিয়ালি মৌজায় ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার মূল্য ৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা। রামচন্দ্রপুর মৌজায় ০.০৮১০ একর জমি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কিনেছেন। মোট এক কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ কিনেছেন তিনি।

সাব-রেজিস্ট্রার ইব্রাহীম একটি গাড়ি ব্যবহার করেন, যার মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। ব্যাংক এশিয়ার ঈশ্বরদী শাখায় পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৮ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে ১২ হাজার ৪২১, অগ্রণী ব্যাংকে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬২, ব্যাংক এশিয়ার আরেক শাখায় এক লাখ ৩৫ হাজার ৩০১, সোনালী ব্যাংকে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৬১৭ টাকাসহ মোট ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার ইব্রাহীম। এভাবে মোট এক কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার এবং ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৯ টাকাসহ মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৯৭৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন তিনি। ইব্রাহীম আলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ৩ কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৫০২ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৯২৫ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

দুদক জানায়, ইব্রাহীম আলী মেয়ে তানজিলা আফরিনের নামে শালগাড়িয়া মৌজায় ১০৯৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ১১০ বর্গফুটের কার পার্কিং স্পেস কিনেছেন, যার মূল্য ২৫ লাখ টাকা। পাবনা সদর উপজেলাধীন ভবানীপুর মৌজায় ০.৮১৩৪ একর জমি ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ টাকায় কেনাসহ মোট ২৯ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ টাকার স্থাবর সম্পদ কেনেন। তিনি একই নামে সিটি ব্যাংকে ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক হন। এভাবে তিনি মেয়ের নামে মোট এক কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, ইব্রাহীম আলী ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর-রূপান্তর করে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্থ করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আদালতের আদেশের মাধ্যমে চলতি বছরের মার্চ মাসে ইব্রাহীম আলীর দুর্নীতি-সংক্রান্ত স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বলেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষে ইব্রাহীম আলীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ঢাকার দারুস সালাম থানায় মামলা করি আমি। মঙ্গলবার পাবনার র‌্যাব ও পুলিশের সহায়তায় ইব্রাহীমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরই তাকে পাবনার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তাকে পাবনা জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক বজলুর রহমান। আদালতের মাধ্যমে তাকে ঢাকায় নেয়া হবে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ