Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমিরাতে ফ্রি ভিসায় গেলেই নিশ্চিত বেকার

amiratমধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন ও কাতারে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশি দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক রয়েছে। আমিরাতে বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ। তবে বন্ধ দেশগুলোয় শ্রমিক নিয়োগ ফের শুরু করতে সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার চাহিদা অনুযায়ী উন্মুক্ত হচ্ছে না।

ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম, আমিরাতে আছেন দীর্ঘ ১৭ বছর থেকে। ফ্রি ভিসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিরাতে শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকলেও ভিজিট ভিসায় বিদেশগামীরা নিয়মিতই আসছেন। আমিরাতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা ইস্যু হয় না। তবুও বাংলাদেশি দালাল চক্র ফ্রি ভিসার কথা বলে অসহায় প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আমিরাতে এই ভিসা বেকার ভিসা হিসেবে প্রচলিত। কারণ এ ধরনের ভিসা দিয়ে যারা আসে তাদের সবাইকে কাজ খুঁজে নিতে হয়, কাজ পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের টাকা পয়সা খরচ করে থাকা-খাওয়া চালিয়ে যেতে হয়।’

আমিরাত প্রবাসী গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘কিছু অসাধু বাংলাদেশি দেশটির প্রশাসনকে অস্থায়ী অফিস দেখিয়ে একটা কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে। এ লাইসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে বাংলাদেশি ভিসা ইস্যু করে সেই ভিসাকে ফ্রি ভিসা বলে বিক্রি করে। একটা ভিসা ইস্যু করতে বাংলাদেশি টাকায় সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু সেটা বিক্রি করে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘আমিরাতে এমনও বাংলাদেশি রয়েছে যারা ৫-৬ বছর অতিক্রম করলেও এখনও তার কফিলকে (স্পন্সর) চোখে দেখেনি বা সে যে কোম্পানির ভিসা নিয়ে এসেছে সেই কোম্পানির অফিসও দেখার ভাগ্য হয়নি। আমিরাতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা ইস্যু হয় না। তবুও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমিরাতে বাংলাদেশি বাদে অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে নেপাল কিংবা ভারতীয়রা আমিরাতে চাকরি নিয়ে যেতে ভিসা বাবদ তাদের খরচ হয় সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ হাজার রিয়াল অথচ বাংলাদেশি ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণায় বাংলাদেশিদের জন্য তা ৩ থেকে ৫ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‌‌অর্থকষ্টে মানবতের জীবন যাপন করতে হচ্ছে অনেক প্রবাসীকে। পরবাসীদের আশায় পথ চেয়ে থাকে পরিবার। পরিবারের করুণ অবস্থার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঋণের সুদ, পরিবারে খরচ, চাকরির খোঁজ, বেতন বকেয়া, আকামার বিষয়ে ইত্যাদির মানসিক চাপে বাসা বাঁধে নীরব ঘাতক স্ট্রোক।

বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসব অসাধু ভিসা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এদের দৌরাত্ম বাড়ছে দিনের পর দিন। শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক হারে। তবে শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিসা ব্যবসায়ীদের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমবাজারে অনেকটা মন্দা ভাব চলে এসেছে।

জানা গেছে, কিছু অসাধু ভিসা ব্যবসায়ীর কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা আমিরাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কিছু সুবিধালোভী প্রবাসী বাংলাদেশি শুধু ভিসার ব্যবসা করার জন্য অফিস খুলে বসে আছে, নিজে একজন বাংলাদেশি হয়েও প্রবাসে বাংলাদেশিদের সঙ্গেই নানা প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছে।

এসব ভিসা ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারণে দেশটির নিয়োগকর্তারাও বাংলাদেশি শ্রমশক্তির ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছে। চলমান এ অবস্থায় আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে প্রবাসী বাংলাদেশি ভুক্তভোগীরা অভিমত প্রকাশ করেন।

লেখক- মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, আমিরাত থেকে

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email