শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:১৫ অপরাহ্ন
শেয়ার

সবুজের টার্গেট ওমান প্রবাসীদের লাশ


sobuj

ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ সবুজ

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। এই চক্রের মূল হোতা ভোলার লালমোহন উপজেলার মোহাম্মদ সবুজ। নিহত কর্মীদের লাশকেই টার্গেট করে গড়ে ওঠা এই প্রতারণার মাধ্যমে সে নিজ এলাকায় নির্মাণ করেছে রাজপ্রাসাদ।

ওমান সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো বৈধ বাংলাদেশি কর্মী মারা গেলে তার ওয়ারিশদের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১৫ হাজার রিয়াল (যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা) প্রদান করে। কিন্তু এই অর্থ মৃত কর্মীদের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই নানা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে সবুজ ও তার সহযোগীরা।

যেভাবে কাজ করে প্রতারক চক্র: তদন্তে জানা গেছে, চক্রটি কৌশলে মৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট, মেডিকেল সনদ হাতিয়ে নেয়। এরপর মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের থেকে ভুয়া আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দেখিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে ক্ষতিপূরণের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে।

২০০৮ সালে ১৫ বছর বয়সে ওমানে গিয়ে সবুজের উত্থান শুরু হয়। সেখানে এক আইনজীবীর গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করার সুবাদে সে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নেয় এবং প্রতারণার পথ খোঁজে। ওমানে কোনো বাংলাদেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেই সবুজের নেতৃত্বে থাকা চক্রটি মুহূর্তেই ওই মৃত ব্যক্তির ‘আত্মীয়-স্বজন’ সেজে ওঠে।

একাধিক মামলা, পলাতক সবুজ: এই জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সবুজের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটের হবিগঞ্জে তিনটি প্রতারণার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তার শ্বশুর মো. মাকসুদুর রহমানও সহযোগিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত।

চট্টগ্রামের মামলা (১): মো. আরিফ নামের এক যুবক মামলা করেন। তার বাবা নূরুল আবছার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে সবুজের মাধ্যমে ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এই ঘটনায় সবুজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

চট্টগ্রামের মামলা (২): মো. খোরশেদ আলম মামলায় উল্লেখ করেন, তার ছেলে ওমর ফারুক রনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর ওমানের আইনজীবী সাইফ আল বুসাইদি ও সবুজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬ লাখ টাকা (১১ হাজার ২০০ রিয়াল) আত্মসাৎ করেছেন।

হবিগঞ্জের মামলা: মো. স্বপন মিয়া মামলা করেন। তার ভাই মো. ফুল মিয়ার সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ টাকা সবুজ ও তার চক্র আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

প্রতারণার অর্থে রাজপ্রাসাদ: নিজের এলাকায় সবুজ প্রতারণার টাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলেছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তার স্ত্রী ইফফাত আরা তিন্নি জানান, তার স্বামী বর্তমানে ওমানে আছেন এবং তাকে কিছু লোক ফাঁসিয়েছে। তবে তিনি এও স্বীকার করেন যে তার বাবা আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।

সবুজের শ্বশুর মো. মাকসুদুর রহমান জামিন নিয়েছেন এবং তারা মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে লালমোহন থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সবুজ একজন ‘বড় ধরনের প্রতারক’। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ওমানে থাকা সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সব মামলা মোকাবিলার কথা বলেন।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের স্বজন হারানোর পর প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের অর্থ ফিরে পেতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি সহযোগিতা কামনা করছে।

সৌজন্যে: কালবেলা