Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিজেদের পাতা ফাঁদেই আটকা বাংলাদেশ?

bd-afganবিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ দেখেও যেন শিক্ষা নিতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের স্পিনাররা স্থানীয় দলকে কুপোকাত করার পরেও, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মূল ম্যাচেও করা হলো স্পিনবান্ধব পরিকল্পনা। আর তাতে লাভের গুড় পুরোটাই পেলো সফরকারীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে স্পিনস্বর্গ বানিয়ে বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো নাম। কিন্তু সেসব দলে ছিলো না পরীক্ষিত বিশ্বমানের স্পিনার। যে কারণে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে, নিজেদের দলে ভুরি ভুরি স্পিনার খেলানোর পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল ছিলো বাংলাদেশ।

কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন আফগানিস্তান এবং তাদের স্কোয়াডে রয়েছে বৈচিত্র্যময় গোটা পাঁচেক স্পিনার, তখনও সেই একই পরিকল্পনা কতটা কাজে দেবে? সেই সংশয় ছিলো ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই। তাই তো ম্যাচের আগে একাদশে এক পেসার খেলানোর কথা জানা গেলে, চিন্তার ভাঁজ পড়ে অনেকের কপালে। কেননা স্পিনস্বর্গ বানালে, তা যে আফগানিস্তান দলকেও দেবে সমান সুবিধা।

ম্যাচে দেখা গেলো এ চিত্রই। আফগানিস্তানের চার স্পিনারের কাছেই কুপোকাত হলো বাংলাদেশ। যে কোনো মাঠে স্পিন সহায়ক উইকেট বানালে বা স্পিনের ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা সাজালে, ম্যাচের ফলে বড় একটি প্রভাবক হয় টস। যেখানে হেরে গিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তখনই মূলত প্রথম দফায় পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নামতে হয় আগে বোলিং করতে।

যতই স্পিন সহায়ক বানানো হোক না কেন, যেহেতু বোলিং করতে হবে ফ্রেশ উইকেটে, তাই প্রথম দিনই উইকেট থেকে স্পিনারদের সহায়তা পাওয়ার আশা করাটাই হতো বোকামি। বৃহস্পতিবার সারাদিনেও তেমন কোনো সুবিধা পাননি সাকিব, তাইজুল, মিরাজ, নাঈমরা। উল্টো উইকেটের চরিত্র বুঝে ব্যাটিং করে প্রথম দিনেই নিরাপদ সংগ্রহ দাঁড় করানোর ভিত পেয়ে যায় আফগানরা।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিন যে খুব একটা স্পিন ধরেছে তাও নয়। দিনের প্রথম সেশনের ২১ ওভারের মধ্যেই বাকি থাকা ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। আগেরদিনে ৫ উইকেটে করা ২৭১ রানের সংগ্রহটিকে তারা নিয়ে ঠেকায় ৩৪২ রানে। তাইজুল ৪, সাকিব ও নাঈম নেন ২টি করে উইকেট। এদের মধ্যে তাইজুল একাই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সমীহ আদায় করতে সক্ষম হন।

কিন্তু এরপর বাংলাদেশের ইনিংসে দেখা যায় এর উল্টো চিত্রই। আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে যেনো কোনো জবাবই খুঁজে পাননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। অবশ্য রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের পাওয়া উইকেটগুলোতে তাদের কারিশমা বেশি নাকি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দায় বেশি? এ বিষয়ে যুক্তিতর্কের আয়োজন করাই যায়।

বাংলাদেশ দলে কোনো পেসার না থাকলেও, মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ইয়ামিন আহমেদজাইকে নিয়েছিল আফগানরা। যিনি সাফল্য এনে দেন প্রথম ওভারেই, সাজঘরে পাঠিয়ে দেন ওপেনার সাদমান ইসলামকে। এরপর টাইগার ইনিংসে শুরু হয় নবী-রশিদের ঘূর্ণি হামলা।

যাতে একে একে কাঁটা পড়েছেন সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হকরা। এই ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধুমাত্র সাকিবই আউট হয়েছেন স্পিনে পরাস্ত হয়ে। বাকিরা উইকেট বিলিয়েছেন উচ্চাভিলাসী শট খেলে কিংবা লাইন-লেন্থ বুঝতে না পেরে। তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজ অবশ্য নিজের উইকেটটি অভিষেক উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন প্রথম টেস্ট খেলতে নামা কাইস আহমেদকে।

তবে সে যাই হোক, ম্যাচের ফলাফলও বা যেমনই হোক না কেন- বড় হয়ে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের পরিকল্পনার ভুল। কেননা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোর বিপক্ষে হয়তো স্পিনস্বর্গ বানিয়ে খেলতে নামার পরিকল্পনা কাজে লাগতে পারে। কারণ তাদের দলে নেই তেমন কোনো পরীক্ষিত স্পিনার। কিন্তু আফগানিস্তান তথা এশিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে এই একই পরিকল্পনা প্রশ্নের জন্ম দেবেই।

তার ওপর দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচেই বাঁহাতি চায়নাম্যান জহির খান ৫ ও লেগস্পিনার রশিদ খান ৩ উইকেট নিয়ে জানান দিয়েছিলেন, তারা প্রস্তুত আছেন স্পিনিং উইকেটের পূর্ণ ফায়দা নেয়ার জন্য। এর সঙ্গে আবার সাগরিকায় যোগ দিলেন মোহাম্মদ নবী ও কাইস আহমেদ। আর তাতেই প্রথম ইনিংসে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের।

শেষ বিকেলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও তাইজুল ইসলাম প্রতিরোধ না গড়লে চাপা পড়তে হতো বড়সড় লিডের নিচে। নবম উইকেটে এসে ইনিংসের সেরা জুটি গড়ে দ্বিতীয় দিন পার করলেও, স্বস্তি নেই বাংলাদেশ শিবিরে। অবশ্য স্বস্তি থাকার সুযোগই বা কই?

প্রথম ইনিংসে যত রানই করুক বাংলাদেশ কিংবা অলৌকিক কিছু ঘটিয়ে যদি লিডও দিয়ে ফেলে আফগানদের, তবু ভয় থাকবে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করার। আর সেটি যতো ছোটই হোক না কেন, আফগানদের চতুর্মুখী স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে সহজ হবে না মোটেও। তাই বারবার আলোচনায় উঠে আসবে, প্রতিপক্ষের স্পিন শক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকার পরও, স্পিনবান্ধব পরিকল্পনায় খেলতে নামার যৌক্তিকতা নিয়ে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email