সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া আর ইন্দোনেশিয়া’র কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মে মাসে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্য হিসেবে নেওয়ার ‘অঙ্গীকার করে’ হ্যাকিং গ্রুপ অ্যানোনিমাস। এরপরই এই দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাবলিক ওয়েবসাইটে এই আক্রমণ চালানো হয়, রয়টার্স-কে এমনটাই জানিয়েছেন দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এই ঘটনার পর ১৪৯টি অঞ্চলে নিজেদের ওয়েবসাইট অ্যাকসেস বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে আফ্রিকার কিছু ছোট দেশও রয়েছে, জানিয়েছেন ব্যাংকটির ডেপুটি গভর্নর রোনাল্ড ওয়াস। তিনি জানান, কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই রকম এমন আক্রমণের শিকার হয়েছে। আর অপরাধীরা আইপি অ্যাড্রেসগুলো শেয়ার করেছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকের মাধ্যমে আট কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়ারঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া আর ব্যাংক অফ কোরিয়া’র চালানো ওই হামলায় ব্যাংকগুলোকে কোনো অর্থ হারাতে হয়নি। মূলত এক্ষেত্রে ডিডিওএস হামলার চেষ্টা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।তবে, এর পেছনে থাকা হ্যাকার কারা ছিল, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার সহযোগিতার কারণে এই হামলাগুলো ব্যর্থ হয়ে যায় বলে মত দিয়েছেন ওয়াস। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকদুটির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা রয়েছে। যারা আক্রমণের শিকার হচ্ছে তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে।”
সাইবার আক্রমণে বিপুল পরিমাণ ডেটার রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় একটি নেটওয়ার্ক সার্ভারে, যাতে অচল হয়ে পরে ওই সার্ভার। প্রযুক্তির ভাষায় একে বলা হয় ‘ডিস্ট্রিবেউটেড ডিনায়াল অফসার্ভিস অ্যাটাক’ বা ডিডিওএস।
২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচয় গোপন রাখা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের অ্যাকটিভিস্ট আর হ্যাকাররা মিলে অ্যানোনিমাস নামের গ্রুপ গঠন করে। মে মাসের শুরুতে তারা একটি ইউটিউব ভিডিওপোস্টে জানায়, তারা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হামলা চালাতে ৩০ দিনের একটি ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে। এই ক্যাম্পেইন-কে ‘অপারেশন ইকারাস’ নাম দেয় তারা।
ব্যাংক অফ কোরিয়া’র কর্মকর্তারা রয়টার্স-কে জানিয়েছেন মে মাসে তাদের ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অন্তত একটি ডিডিওএস আক্রমণ চালানো হয়। তবে, এতে কোনো ক্ষতি হয়িনি বলেও জানান তারা।
ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া’র সাইবার নিরাপত্তা প্রচেষ্টা’র নেতৃত্বে থাকা বেনি সাদওইকো রয়টার্স-কেবলেন, “মে মাসে, আমরা অনেক ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছি। তারা ব্যাংকগুলোর মর্যাদায় আঘাত হানতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে, যে সব দেশে সাধারণত আমাদের (ওয়েবসাইট) অ্যাকসেস করা হয় না, সে সব দেশের আইপি অ্যাড্রেসগুলো আমরা ব্লক করে দিচ্ছি।”
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, সোমবার দিনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তাদের ইমেইল সার্ভারে২৭৩টি ভাইরাস আর ৬৭ হাজার স্প্যাম ইমেইল শনাক্ত করা হয়েছে।
মে-এর শুরুতে অ্যানোনিমাস হ্যাকারদের লক্ষ্যে পরিণত হয় গ্রিসের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক মিনিট পরই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এটি সামলাতে সক্ষম হয়।একই মাসে ওয়েবসাইট ছোটখাট সাইবার হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে দ্য ব্যাংক অফ সাইপ্রাসও।