আজ দক্ষিণ কোরিয়ার ভোটাররা তাদের দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ভোট দেবেন। আজ ভোর ৬টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে এবং রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মুন জে ইন এবং আন ছল সু থাকলে গত এক সপ্তাহে হোং জুন পিয়ো’র অবস্থানও শক্ত হয়েছে। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাই দেখছেন সবাই। এবারের নির্বাচনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি কমানো, দুর্নীতি নির্মূল, উত্তর কোরিয়া ইস্যুসহ নানা বিষয়ে প্রার্থীদের অবস্থানের উপর ভোট দিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এযাবত্কাল দেশটির প্রবৃদ্ধি ও সম্পদ চায়েবল নামে পরিচিত পারিবারিক নিয়ন্ত্রণাধীন কনগ্লোমারেটগুলোর হাতেই কেন্দ্রীভূত থেকেছে। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্ষমতাবানদের যোগসাজশের অভিযোগকে ঘিরে সৃষ্ট জনরোষের কারণেই সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ককে ক্ষমতা থেকে হাজতখানায় যেতে হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় কনগ্লোমারেট স্যামসাংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি জে ইয়োংকেও একই কারণে কারাবরণ করতে হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থী মুন এবং আন অর্থনৈতিক অন্যায্যতা ও উচ্চ বেকারত্বের কারণে সৃষ্ট অসন্তোষকে নিজের শক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়েছেন। কর্মসংস্থান-বৈষম্যের বিষয়টিও দক্ষিণ কোরিয়ায় বড় ইস্যু। বড় কোম্পানীগুলোতে পূর্ণকালীন নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যত্র কর্মরত অথবা বেকার জনগোষ্ঠীর অসাম্য দিন দিন বাড়ছে।
বিভিন্ন সরকারি খাতে মোট ৮ লাখ ১০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছেন মুন। এজন্য তিনি ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি উওন (৩৭০ কোটি ডলার) বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি ক্ষমতাগ্রহণের পরপর ১০ লাখ কোটি উওন (৮৮০ কোটি ডলার) অতিরিক্ত বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। এ বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যয় হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আনের সমর্থকরা বলছেন, কর্মসংস্থানের বিষয়ে মুনের পরিকল্পনা পূর্ববর্তী সরকারগুলোর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। এযাবত সরকারগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় কোম্পানীগুলোর ওপর নির্ভর করেছে। এজন্য তাঁদেরকে বারবার বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর জের ধরে বড় বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাবানদের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি ও দুর্নীতি শুরু হয়েছে।
আনের পক্ষের নীতিনির্ধারকরা এজন্য বিধিনিষেধ শিথিলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের মতে, বিধিনিষেধ শিথিল হলে কোম্পানিগুলো ঝুঁকি নিতে উত্সাহিত হবে। এ অবস্থায় সরকার ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় মনোনিবেশ করতে পারবে।
আনের ভাষায়, ‘এ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধিতে সরকারই নেতৃত্ব দিয়েছে। একই সময় বড় বড় কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ ধারা পাল্টাতে হবে। বেসরকারি খাত, বিশেষত ক্ষুদ্র-মাঝারি কোম্পানি ও ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান বড় হলে আরো বেশি উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’