
গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন আর আশঙ্কা নয়, এক নির্মম বাস্তবতা। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি উপত্যকার প্রতি তিনজনের দুজন মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। খাবারের অভাবে সোমবার (গতকাল) আরও ৫ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অথচ সীমান্তে ত্রাণবাহী ২২ হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও, ইসরায়েল সেগুলোর একটিকেও প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীরা পর্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত কাটাচ্ছেন। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা মানার বলেন, “আমাদের বাড়িঘর নেই, নিরাপদ আশ্রয় নেই। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি আজ আবার কী হবে—বোমা পড়বে না তো? স্বজন হারাতে হবে না তো? খাওয়ারও কিছু নেই, পানির ব্যবস্থাও নেই।”
ত্রাণ আটকে রেখে মৃত্যুর দায় এড়ানো যায় না
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, “গাজার শিশুরা এখন কেবল বোমার আতঙ্কে দিন কাটায় না। তারা জানে, খাবার না পেলেও মৃত্যু আসতে পারে। আর কেউ বেঁচে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করা কঠিন।”
ইসরায়েল গত শুক্রবার মাত্র ৭৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। গাজার কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ পৌঁছানো দরকার।
শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে
গাজায় যুদ্ধ শুরুর আগেই বহু শিশু ছিল অপুষ্টির শিকার। এখন খাদ্য সংকট তাদের অবস্থা আরও নাজুক করে তুলেছে। উত্তরের এক আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সামাহ মাতার বলেন, তার দুই ছেলে ইউসুফ (৬) ও আমির (৪) – দুজনই চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশেষ করে আমির সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত, তার জন্য বিশেষ খাদ্য দরকার। কিন্তু এখন কোনো ডায়াপার, ফর্মুলা কিংবা চিনি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “ইউসুফের ওজন ছিল ১৪ কেজি, এখন তা কমে ৯ কেজিতে নেমে এসেছে। আমিরের ওজন ৬ কেজিতে ঠেকেছে। যুদ্ধের আগে তাদের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। ফল, দুধ, শাকসবজি পাওয়া যেত। এখন সামান্য ময়দাও জোটে না।”
নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছুঁইছুঁই
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত ৪৩৯ জন। এর মধ্যে অন্তত ২৯ জন মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিতে মারা গেছেন। অনাহারে মৃতের সংখ্যা গত কয়েক সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ জনে, যাদের মধ্যে ৯৩ জনই শিশু। অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ হাজার ৯৩৩ জন, আহত ১ লাখ ৫০ হাজার ২৭ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির দাবি
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও। প্রতিনিধি পরিষদের বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেসম্যান রো খান্না এই চিঠির প্রধান উদ্যোক্তা। ইতিমধ্যে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাতেও একই দাবি উঠেছে।



































