মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫
ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু মতামত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:০৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ: আঠারো কোটি মানুষের পরিচয়, মর্যাদা এবং ঐক্যতার সোপান


Shariful Islam Dulu

বিএনপির প্রতিষ্ঠা দিবসে জাতীয়তাবাদের তাৎপর্য
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতীয়তাবাদ শব্দটি শুধু একটি মতাদর্শ নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। স্বাধীনতার পর জাতির সামনে যখন নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের চ্যালেঞ্জ আসে, তখন সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী দর্শনের জন্ম দেন—বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক ধারণাই নয়, বরং এটি হয়ে ওঠে জাতির আত্মপরিচয়, মর্যাদা ও ঐক্যের প্রতীক। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হিসেবেই এই দর্শন আজও অটুট এবং প্রাসঙ্গিক।

জাতীয় পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা
জিয়াউর রহমান তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” শব্দটি প্রবর্তন করে জাতিকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে বিভক্তি, মতভেদ ও নানা সংকটের মধ্যে তিনি তুলে ধরেন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় দর্শন, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল—
“ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি বা অঞ্চল নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকই বাংলাদেশী এবং সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী।”
এই দর্শন জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা প্রথমে বাংলাদেশী—একটি স্বাধীন জাতির সদস্য, যার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক অবস্থান।

ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্ম কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতার জন্য নয়; এটি ছিল আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সেই সংগ্রামেরই এক অব্যাহত ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র শুধু ভৌগোলিক অস্তিত্বেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের মধ্য দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় জীবন গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

আধুনিক প্রজন্মের কাছে তাৎপর্য
আজকের বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় পরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমাদের জাতিসত্ত্বা টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদই সবচেয়ে কার্যকর দিকনির্দেশনা।
এটি আমাদের শেখায়—
• গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা
• অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন
• টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া
• বৈশ্বিক অঙ্গনে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান অর্জন
বিশেষত তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ শুধু রাজনৈতিক দর্শন নয়, বরং ভবিষ্যৎ গঠনের একটি শক্তিশালী দিকনির্দেশনা।

ঐক্যের সোপান
বাংলাদেশে বিভক্ত রাজনীতি, মতাদর্শগত সংঘাত ও দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ঐক্যের অপরিহার্য ভিত্তি হলো আমাদের জাতীয়তাবাদ। জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত এই দর্শন নাগরিকদের একসূত্রে গেঁথে দেয় এবং মনে করিয়ে দেয়— “আমরা আঠারো কোটি মানুষ, ভিন্ন ধর্ম-বর্ণের হলেও পরিচয়ে আমরা সবাই বাংলাদেশী।”
এই ঐক্যই হতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান শক্তি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠা দিবসের তাৎপর্য
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা দিবস কেবল একটি রাজনৈতিক দলের জন্মদিন নয়; এটি জাতীয়তাবাদের পুনঃপ্রতিশ্রুতির দিন। বিএনপি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের পরিচয়, মর্যাদা ও ঐক্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদই একমাত্র কার্যকর আদর্শ।
এই দিনটি তাই একটি বিশেষ বার্তা দেয়—দলীয় সীমারেখার ঊর্ধ্বে উঠে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

অতপর…
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কোনো দলীয় স্লোগান নয়; এটি জাতির আত্মপরিচয়ের মর্মকথা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা শুধু ভৌগোলিক নয়, বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠা দিবসে একটি নতুন অঙ্গীকার হোক—
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু: পলিটিক্যাল ইনোভেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিষ্ট

[মতামত বিভাগের সব মতামত লেখকের নিজস্ব]