শুক্রবার । ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ৬ জুলাই ২০১৫, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

ব্রাজিল থেকে আনা গমে জীবন্ত পোকা


Kamrulব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গমে জীবন্ত পোকা বা কীট রয়েছে বলে হাইকোর্টে দেয়া খাদ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষাগারে সরবরাহকৃত এ গমে পোকার পরিমাণ পরীক্ষাগারভেদে কমবেশি রয়েছে। তার পরও এই গম ‘মানুষের খাওয়ার উপযোগী’ বলে মতামত দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।

ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম বিষয়ে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলার পর খাদ্য অধিদফতর থেকে গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এই গম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে একটি রিট আবেদন দায়ের হলে আদালত এ নির্দেশ দেন।

আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে খাদ্য অধিদফতর বলেছে, ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী। অথচ একই প্রতিবেদনে যুক্ত জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, শেরপুর, পটুয়াখালী, মাগুরা, ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ভোলা, মাদারীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নেত্রকোনা ও পিরোজপুর কেন্দ্রের পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব পরীক্ষাগারে সরবরাহকৃত নমুনায় (গমে) জীবন্ত পোকা বা কীট বিদ্যমান। এসব গম যথাযথভাবে কীট নিয়ন্ত্রণের পর বিলি-বিতরণ করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়পুরহাট কেন্দ্রে নষ্ট গম ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, সিরাজগঞ্জে নষ্ট গম ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বগুড়ায় ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, শেরপুরে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, মাগুরায় ৫ শতাংশ ৪১ শতাংশ, ফরিদপুরে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, লক্ষ্মীপুরে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, শরীয়তপুরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, ভোলায় ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, মাদারীপুরে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, খুলনায় ৫ দশমিক ১০ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যশোরে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মেহেরপুরে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, বাগেরহাটে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নেত্রকোনায় ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও পিরোজপুর জেলায় ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ নষ্ট গম সরবরাহ করা হয়েছে। এসব পরীক্ষাগারের গমে জীবন্ত পোকা বা কীট রয়েছে ১-২ শতাংশ।
এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে শুনানির জন্য রিট আবেদকারী পক্ষ সময় চাইলে আদালত ৮ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রাখেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে দেন। আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদালত থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার প্রতিবেদনে বলেছেন, গম খাওয়ার উপযোগী। অথচ অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, গমে পোকা আছে এবং তা সাব স্ট্যান্ডার্ড। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে অধিদফতরের বক্তব্য সঠিক নয়। এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য সময় চাওয়া হলে আদালত ৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।

ব্রাজিল থেকে ‘নিম্নমানের’ গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন এই রিট আবেদনটি করেন। এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে গত ৩০ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি না, সে বিষয়ে খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদফতরের ডিজিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী খাদ্য অধিদফতরের ডিজি পাঠানো কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ।