টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলায় বন্যায় দুই দিনে ৩৮ জন মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধা, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, ও বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
প্রবল পানির চাপে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩ পয়েন্টে ধস সৃষ্টি হবার ফলে নতুন করে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বড় তিনটে নদীর অন্তত ১৯ পয়েন্টের ঝুঁকিপুর্ণ এলাকাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে। ধস আতঙ্কে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ সংলগ্ন এলাকার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
জামালপুরে ‘৮৮ সালের চেয়ে বড় বন্যা: ওদিকে, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১৯৮৮ সালের বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়ে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টেমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ৮৮-এর বন্যায় এই পয়েন্টে পানি ছিল সর্বোচ্চ বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপরে।
ইতোমধ্যে মধ্যে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জামালপুর সদর ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাদারগঞ্জের চাঁদপুর-নাংলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দেড়শ মিটার ভেঙে এই উপজেলার ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।
বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে গিয়ে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার রাতে ঢাকা থেকে আগত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনসহ ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন দুটির যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জামালপুরে এ পর্যন্ত ৩০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
দিনাজপুরে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি: দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলার ১৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বাড়ি-ঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ। রোববার দুপুর থেকে বৃষ্টি থেমে গেলেও উজানের ঢলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা।
বন্যায় দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলার সদরের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তাছাড়া, বন্যায় পানিতে ডুবে, সর্পদংশনে এবং দেয়াল চাপায় এ যাবত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেই বাঁধ সংস্কারে প্রথমে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এর পর সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ জন সদস্য বাঁধ সংস্কার ও বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।
দিনাজপুরকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি বিএনপির: ওদিকে, দিনাজপুরকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ (মঙ্গলবার) দিনাজপুর শহরের বাঙ্গিবেচা ঘাটে পানিবন্দী দুর্গত মানুষের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কালে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।
বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের আহ্বান: তাছাড়া, উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং সিলেট অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের নেতাকমীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার এ আহ্বান জানান।
উত্তরাঞ্চলে সেনা মোতায়েন: ওদিকে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে তলিয়ে গেলে সরকারের নির্দেশে জনস্বার্থে প্রাথমিকভাবে গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় ৬৬ পদাতিক ডিভিশন হতে ১ প্লাটুন সেনাসদস্য ঠাকুরগাঁও শহরে মোতায়েন করা হয়। সেনাসদস্যরা রাতভর উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ১৩ই আগস্ট সকালে প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর সদর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ২ প্লাটুন করে সেনাসদস্য উদ্ধার কাজে মোতায়েন করা হয়। বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটলে বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে রোববারই পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য আরো অধিক সংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে দিনাজপুর সদরে তিনটি প্লাটুন ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় এক কোম্পানি সেনাসদস্য বন্যা দুর্গত মানুষের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছে।