মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় দেশ ওমান। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সালালাহতে প্রবাসীরা ইচ্ছে করলেই ঘুরে আসতে পারেন। মরুর মধ্যেও যে প্রকৃতি লুকিয়ে থাকে এখানে না আসলে বোঝায় যেতো না।
মরুভূমির হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে সালালাহ শহরটিতে প্রবেশ করতেই স্বাগতম জানাবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে। কুয়াশাচ্ছন্ন সড়ক। স্থানীয় ভাষায় খারিফ বলা হয়। খারিফে সড়ক এত বেশিই আচ্ছন্ন দিনের বেলায় লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো খুব দুরূহ। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সমতলে পৌঁছে সবুজ পরিপাটি শহরটি দেখে মনে মনে আপসোস হবে আহ আমাদের দেশটিও এমন সবুজে ঘেরা।
শহরে পর্যটকদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত হোটেল ব্যবস্থা। যদি সালালার রূপ রহস্য খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চান, তবে হাতে কয়েকটা দিন নিয়ে আসুন এখানে। শুরুতে শহর থেকে ৩৭ কি.মি. দূরে পাহাড়ি পথ বেয়ে গাড়িযোগে যেতে পারেন নবী আইয়ুব (আ:) এর কবর জিয়ারতে।
আইয়ুব নবী সারা শরীর পঁচে যাওয়ার মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে কোথায় বসবাস করেছিলেন। পাহাড়ের পাদদেশে যে পানির ফুসকনিটিতে গোসল করতেন, সেটিও দেখতে পাবেন সেখানে। একসঙ্গে কবরে জিয়ারত সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যাবে এখানে এসে। সালালাহ সিটির ভেতর ইমরান নবী (আ:) এর ২ শত ফুট লম্বা কবরটি দেখে অনুমান হয়ে যাবে পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নে মানুষ কত লম্বা ছিল।
শহর থেকে সামান্য বের হলে সাগর পাড়ে রয়েছে ইউনুস নবীকে মাছে ভূমি করে দেওয়ার স্থানটি। এছাড়া রয়েছে একাধিক সাহাবীদের কবর, ইসলামের বহু নিদর্শনের স্থান।

এবার শহর ছেড়ে বের হয়ে ৬০ কি.মি. পথ অতিক্রম করে ছুঁটে যান ওয়াদি দারভেত। যেখানে সবুজ পাহাড়ের দু’পাশ মনে করিয়ে দেবে রাঙামাটি কিংবা বান্দরবানের কথা। সবুজ পাহাড়ের ভেতরে গিয়ে দেখা মেলে অপরূপ জলরাশি। পাহাড় থেকে নিচে পড়ার দৃশ্যগুলো আপনার দৃষ্টি আগলে রাখবে।
পর্যটকরা ভিড় করেছে সেখানে। তার আশপাশের দৃশ্যগুলো এতই পরিপাটি মনে হবে কোন ইউরোপ মহাদেশের দেশে রয়েছেন আপনি। ওয়াদি দরবাত দেখা শেষে তার ২৫ কি. মি. পরে মিরবাত-তাকাহ রোডে রয়েছে অটোমেটিক গাড়ি চলাচলের সড়ক। যাকে ম্যাগনেট রোড বলা হয়। উপরগামী সড়কে গিয়ার ছাড়া চলে গাড়ি!
সালালাহ ভ্রমণে গিয়ে মুগশাল বিচ না দেখলে সালালাহ ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে। এটিও শহর থেকে ৪৭ কি.মি. দূরে। সাগরের ঢেউ এর গতির পরিমাণ যে কি রকম হতে পারে তা দেখা যাবে এখানে। পাহাড় যে কতো রঙ এর, কতো ঢং এর তারও দেখা মিলবে এ বিচে আসলে।
হাতে যদি সময় থাকে, ওই সড়ক ধরে যেতে পারেন ওমান- ইয়ামেন বর্ডার ডালকুট। ডালকুটে দেখার মতো তেমন কিছু নেই, তবে এখানের সৌন্দর্য যাত্রাপথের আকাঁবাকা ১৪৫ কি.মি পথ। যেতে যেতে খুব অবাক হবেন, পাহাড়ের এতই বেশি ওপরে সড়ক যা আকাশের মেঘও হার মানবে।
কোথাও কোথাও মেঘ নিচে আর আপনি তার উপরে! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে এক হাজার ফুট ওপরে পাহাড়ে পাহাড়ে সমতল আবার সেখানে লোকারণ্য দেখে সত্যিই আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন। আরবের পথে প্রান্তরে যে উটের সারি সারি লাইন ছবি কিংবা ভিডিওতে আমরা দেখতে পেতাম তার বাস্তব দৃশ্য এখানে চোখে পড়বে অহরহ।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ





































