Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভারতে মারমুখী পুলিশ, মুসলিম সাংবাদিকের দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি

india-newsবিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমনে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে সেখানকার পুলিশ। এ সংঘাতে বিভিন্ন রাজ্যে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খেতে থাকা পুলিশ মারমুখী আচরণ করছে পেশাদার সাংবাদিকদের সঙ্গেও। উত্তাল উত্তর প্রদেশে এক মুসলিম সাংবাদিককে আটক করে তাকে সাম্প্রদায়িক গালাগাল করেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি তার দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলার হুমকিও দেন এক কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশের লখনৌতে জনতার বিক্ষোভের সময় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুর উত্তর প্রদেশ প্রতিবেদক ওমর রশিদ পুলিশের এই সাম্প্রদায়িক আচরণের শিকার হন। সেদিন পুলিশের গুলিতে লখনৌতে একজন প্রাণ হারান। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তা দমনে গুলি চালায়, এতে এখন পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর মিলেছে।

chardike-ad

বৃহস্পতিবার পুলিশের হাতে হেনস্থা হওয়ার কথা জানিয়ে সাংবাদিক ওমর রশিদ জানান, তিনি সেদিন স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন। সঙ্গে তার স্থানীয় এক বন্ধুও ছিলেন। তখন ওই রেস্টুরেন্টে ঢুকে একদল পুলিশ।

রশিদ বলছিলেন, ‘আমি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য রেস্টুরেন্টের একজনের ওয়াইফাই ব্যবহার করছিলাম। হঠাৎ সাদা পোশাকে আসা চার-পাঁচজন আমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তারা তার পরিচয় জানতে চায়। এমনকি তারা আমার পরিচয়ও জানতে চায়। তারপর তারা আমার বন্ধুকে একটি গাড়িতে তুলে নেয় এবং আমাকেও সঙ্গে যেতে বলে। আমি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তারা আমাকে নিতে জবরদস্তি শুরু করে।’

‘একপর্যায়ে তারা আমাদের নিয়ে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখে। তারা আমার মোবাইল ফোনসহ সবকিছু কেড়ে নেয়। আমার বন্ধুকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। তাকে জেরা করতে করতেই সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার দায় নিতে বলে। তারা আমাকেও সহিংসতায় জড়ানোর উপায় খুঁজতে থাকে এবং আমাকে বলে, আমিই এই সহিংসতার মূল ষড়যন্ত্রকারী।’

‘দ্য হিন্দু’র এই সাংবাদিক বলেন, ‘তারা আমাকে বলতে থাকে, এখানে কিছু কাশ্মীরি এসে সহিংসতা ঘটাচ্ছে এবং তাদের সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চায়। আমি যখনই তাদের কিছু বলতে যাই, তারা আমাকে চুপ করিয়ে দেয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে এবং বলতে থাকে, তোমার সাংবাদিকতা তুমি যেখানেই ফলাও, আমরা পরোয়া করি না। আমার বিরুদ্ধে তাদের কাছে প্রমাণও নাকি আছে বলতে থাকে। পরে তারা আরেকটি গাড়িতে আমাদের এক ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে সাম্প্রদায়িক গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমার দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন।’

ওমর রশিদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর ‘দ্য হিন্দু’ কর্তৃপক্ষ জানতে পারার পর তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ মহাপরিচালক ও পি সিংয়ের কাছে ফোন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ওমর রশিদ আটক থাকার সময়ই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও পি সিংয়ের কাছে ফোন করলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভের সময় আইনজীবী ও অধিকারকর্মী মোহাম্মদ শোয়েব এবং সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা ও অধিকারকর্মী এস আর দারাপুরীকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে কি-না জানা যায়নি।

এ বিষয়ে ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী মানবাধিকারকর্মী সন্দীপ পান্ডে বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এখন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে লেগেছে।’

এদিকে উত্তর প্রদেশে শুক্রবারের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালানো নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলেও শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজ্যের পুলিশ প্রধান ও পি সিং দাবি করেন, বিক্ষোভ মিছিল লক্ষ্য করে একটি গুলিও চালায়নি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের মেঙ্গালুরুতেও পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩০ সাংবাদিককে আটক করা হয়। জনতার বিক্ষোভের সময় পুলিশের হাতে সাংবাদিকদের হেনস্থা হওয়ার কিছু ভিডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওগুলো দেখে সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের এমন মারমুখী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করলে প্রথমেই এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকসহ গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ‘নির্যাতিত’ হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থী।