Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিজের ভুলে বিমানবন্দরে বিড়ম্বনা

probashiভ্রমণপ্রিয় কিংবা প্রবাসীদের জন্য লাগেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। কোথাও যাওয়ার আগে প্রথমেই মাথায় আসে সঙ্গে কী কী নেওয়া যায়। বিদেশ থেকে দেশে যাওয়ার সময় যে জিনিসটা সবার আগে আমরা কিনি সেটা হলো লাগেজ। ব্যক্তিবিশেষ ছোটবড় সব ধরনের লাগেজই কিনি।

তবে বাঙালিরা অল্প টাকায় বেশি জিনিস কেনায় অভ্যস্ত। ভেবেই নিই যা হওয়ার হবে। না বুঝে লাগেজও কিনে থাকে। বিমানের টিকিটের গায়ে নিয়ম-কানুন না দেখে প্রিয়জনের জন্য মালামাল কেনাকাটা করি। শুধু নিজেদের ভুলেই বিমানবন্দরে আমাদের মতো অসহায় প্রবাসীরা বিড়ম্বনায় পড়ি।

chardike-ad

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার সময় প্রতিটি বিমানেই নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৪০ কেজি মালামাল বুকিং দেয়া যাবে। এর বেশি মালামাল বহন করা যায় না। তবে সঙ্গে করে ১০ কেজি বহন করা যায়। এজন্য মালামাল কেনার সময় একটু সচেতন হয়েই কেনাকাটা করতে হয়। অনেক সময় ৪০ কেজির ওপর মালামাল হলে বিমানবন্দরে রেখে যেতে হয়। কিংবা বুকিংয়ের সময় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

গত বছর আমি আর আমার এক পরিচিত বড় ভাই বাংলাদেশে যাওয়ার সময় নিজেদের মালামাল বিমানবন্দরে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। মালামাল বেশি হওয়ার কারণ আমরাই দায়ী। যেখানে বিমান টিকিটে উল্লেখ করা থাকে বুকিং ৪০ কেজি আর হাতে বহন করা যাবে মাত্র ১০ কেজি। সেখানে আমরা বুকিংয়ের জন্য ৬০ কেজি হাতে বহনের জন্য ২০ কেজি নিয়ে যাই।

এই অতিরিক্ত মালামাল নেওয়ার কারণ হলো, পরিচিতিজনরা তার ভালোবাসার মানুষের জন্য উপহার পাঠান। দেশে যাওয়ার সময় কেউ যদি বলে আমার সন্তানের জন্য এক প্যাকেট চকলেট পাঠাব, কিংবা নব্য বিবাহিত বউয়ের জন্য উপহার, বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য কিছু পাঠাব তখন কেউ না করতে পারে না।

এভাবে ২০জন যদি এক কেজি করে পণ্য দেয় তাহলে ২০ কেজি। তাছাড়া অনেক সময় অনেকেই এক কেজির কথা বলে ২ কেজি কিংবা ৩ কেজি দিয়ে যায়। কিন্তু কাউকে ফেরত পাঠানো যায় না। তাই অনেক প্রবাসীর মালামাল বিমানবন্দরে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি হয়। তবে আমি নিজে দেখেছি মালামাল বেশি হলে অনেকেই বন্ধুদের উপহার রেখে নিজের মালামাল ফেলে যায়। তাদের ভাবনা আমার মালামালের চেয়ে প্রিয়জনদের জন্য পাঠানো উপহার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যাক সে কথা মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার পরিচিত এক ভাই মোহন (ছদ্মনাম) প্রতি বছরই বড় লাগেজ কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত ১২ বছর যাবত তিনি দেশে যান না। তার এই লাগেজ অন্যরা ব্যবহার করে। গত বছর আমিও দেশে যাবার সময় তার লাগেজ ব্যবহার করেছিলাম। কিন্ত সিঙ্গাপুর ফেরার পর তিনি লাগেজের ক্রুটি পাওয়া যায়। চাকা কাজ করছে না। তিনি মন খারাপ করে লাগেজ ফেলে দেন।

তিনি যেহেতু দেশে যান না। সেহেতু প্রতি বছর তার লাগেজ কেউ না কেউ ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। এই নিয়ে মোহন ভাইয়ের কোনো আক্ষেপ নেই। বরং প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে তুমুল আগ্রহ নিয়ে লাগেজ কিনে হাসিমুখে রুমে ফেরেন। গতকালও বিশাল এক লাগেজ কিনে বাসায় ফিরলেন। তার লাগেজ কেনা দেখে অনেকেই মুখ টিপে হাসে। কিন্তু তিনি কিছুই বলেন না। বরং সবার হাসিটা উপভোগ করেন।

তার লাগেজ দেখে আমি নিশ্চিত হলাম এবারও দেশে গেলে আর আমাকে লাগেজ কিনতে হবে না। একেকজন মানুষ একেক রকম কাজ করে আনন্দ পায়। তিনিও হয়ত প্রতি বছর লাগেজ কিনে আনন্দ পান। যখন আমরা তার লাগেজ নিয়ে দেশে যাই তখন হয়ত তিনি এক ধরনের সুখানুভূতি অনুভব করেন। যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

প্রবাসীরা একটু সচেতন হলেই বিমানবন্দরে বিড়ম্বনা কমে যাবে। দেশে কিংবা ভ্রমণে যাওয়ার আগে সম্ভব হলে নিজেদের মালামাল নিজেরাই ওজন করে নেব। অতিরিক্ত মালামাল পরিহার করলে আপনার যাত্রা অবশ্যই শুভ হবে।

ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর