Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রবাসীদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা

death-bodyএকজন প্রবাসীর উপর ভরসা করে একটা পরিবার স্বপ্নের পসরা সাজায়। আর এভাবেই এপারে ভরসা করে ওপারে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল। অনেক পরিবার তিনবেলা খাবারের জন্যও চেয়ে থাকে এই প্রবাসীর উপর। এ রকম হাজারও দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জন্মভূমি ও জননীকে ছেড়ে অচেনা অজানা দেশে পাড়ি জমায় হাজারও প্রবাসী।

কেউ বলেন স্বপ্ন পূরণের আরেক না প্রবাসজীবন। কিন্তু তারা জানেই না কতটা ঝুঁকি নিয়ে এই মানুষগুলো পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু সব প্রবাসীরা কী পারে তার পরিবারের সকল স্বপ্ন পূরণ করতে? হয়ত চাইলেও অনেকেই তা করতে পারে না। অনেক সময় আমরা অনেক প্রবাসীর মৃত্যুর সংবাদ পায়। আবার কখনো লাশের খবরও মেলে না। হায়রে পরবাসী।

chardike-ad

একবুক আসা-ভরসা নিয়ে পাড়ি দেয়া প্রবাসীদের স্বপ্ন কখনও কফিনবন্দি হয়ে দেশে ফিরছে। বহু লাশের সন্ধান পর্যন্ত মিলছে না। ‘যারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ গেছেন একমাত্র তাদের কাছেই শুনেছি সাগরে আল্লাহই ছিল শেষ ভরসা। কত লাশ ভাসতে দেখেছি সমুদ্রে’।

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে মোট ২৫৬ জন প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছে। এরমধ্যে ২৮ জন দুর্ঘটনাজনিত কারণে। ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেছে ২৫৫ জন প্রবাসী তার মধ্যে ৪১ জন দুর্ঘটনায়।

২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেছে ২১৭ জন প্রবাসী, যার মধ্যে বেশিরভাগই ব্রেইন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকে। কুয়েতের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অনেক প্রবাসী ব্রেইন ও হার্ট স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আবার অনেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেছে। পরিবারের সেবা যত্নে সুস্থ হয়ে হয়তোবা এই প্রবাসেই আবার ফিরে আসবে।

জানা গেছে, বর্তমানে কুয়েতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। প্রবাসীদের অকালমৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী সাংবাদিক গোলাম মাওলা হাজারী বলেন, ‘দালালের ফাঁদে পড়ে দেশের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবকরা দক্ষতা ছাড়াই বিদেশ আসছে। এমন কি তারা ভিসার ধরনও বোঝে না। ফ্রি ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসে রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে। না বুঝে বিদেশ এসে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে না। তাদের সেই স্বপ্নই আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশগামীরা যে স্বপ্ন নিয়ে আসছে তাদের সেই স্বপ্ন যখন ভেঙে যায় তখন তারা নিজেকে খুবই অসহায় মনে করে। এ ছাড়া আকামা সমস্যা, ঠিকমতো বেতন না পাওয়া, দেশ থেকে ঋণের টাকার জন্য পাওনাদার ও সংসার খরচের জন্য পরিবারের বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক আবদার ও চাহিদার কথা শুনে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগে প্রবাসীরা। এসব কারণে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনিয়মিত খাদ্য অভ্যাসের ফলে স্ট্রোক হয়ে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে হাজারও প্রবাসী।

এ সাংবাদিক বলেন, প্রবাস জীবন কখনোই সুখকর হয় না। তবু মানুষ প্রবাসী হয়। পরিবারের মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখার আশায়, এদের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়ে পাড়ি জমায় প্রবাস নামের যন্ত্রণায়। নানামুখী কারণে প্রবাসী হওয়া এসব মানুষগুলোর কাঁধে একটি নয় দু’টি নয় গোটা পরিবারের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব থাকে। যে দায়িত্বের কথা চিন্তা করে এরা ভুলে যায় নিজের স্বপ্নকে। দেশে রেখে আসা পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন পূরণকে একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে স্থীর করে প্রতিনিয়ত সহ্য করে যাচ্ছে অসহনীয় কষ্ট। অসহনীয় কষ্টের আরেক নাম প্রবাসী জীবন’।

সাদেক রিপন, কুয়েত