Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নামাজি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেন না ইজিবাইক চালক ইমন

imonযাদের সামর্থ্য নেই তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেন না ইজিবাইক চালক (টমটম) মো. ইবাদুর রহমান ইমন। বিশেষ করে অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভাড়া ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছে দেন তিনি। এদের পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার নামাজি যাত্রীদের ফ্রি গন্তব্যে নিয়ে যান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফ্রি সেবা দেন ইজিবাইক চালক ইমন।

তিন মাস ধরে ফ্রিতে এ সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। বিষয়টি যাত্রীদের জানানোর জন্য দুদিন আগে ইজিবাইকের সামনে একটা স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তখনই বিষয়টি নজরে আসে সবার। ইমনের ইজিবাইকের সামনে সাদা কাগজে লেখা- ‘অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি সার্ভিস। প্রতি শুক্রবার নামাজি মুসল্লিদের জন্য ফ্রি সার্ভিস।’

chardike-ad

ইজিবাইক চালক ইমনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ফরেস্ট অফিস এলাকায়। অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় এগিয়ে আসার বিষয়ে ইমনের সঙ্গে কথা হয়। ইবাদুর রহমান ইমন বলেন, ২০১৮ সালে আমার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার বাবা ঠেলাগাড়ি চালান। ছোটবেলা থেকে অভাব-অনটনে বড় হয়েছি। গরিবের দুঃখ-কষ্ট আমি বুঝি। অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল আমার। কিন্তু সে অনুযায়ী সামর্থ্য নেই। যেটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে মূলত আমার এ উদ্যোগ। যদি অসহায় কোনো মানুষ আমাকে দিয়ে সেবা পান তবেই কষ্ট সার্থক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ইমন। অর্থের অভাবে আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। পরে ট্রাক চালকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন বেশ কিছুদিন। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ট্রাক চালকের সহযোগী হতে পারেননি ইমন।

তিন মাস আগে ঠেলাগাড়ি চালক বাবা এবং দাদির কাছ থেকে কিছু টাকা নেন ইমন। এর সঙ্গে নিজের জমানো কিছু টাকা মিলিয়ে ৯১ হাজার টাকায় ইজিবাইক কেনেন। প্রথম দিন থেকে অসহায়, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভাড়া ছাড়াই পৌর এলাকার বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার নামাজিদের ফ্রি সার্ভিস দেন ইমন।

molovibazarপ্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা চলে ইমনের ফ্রি সার্ভিস। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুপুরের খাবারের সময় এ সার্ভিস বন্ধ রাখেন তিনি। বিকেল ৪টা থেকে রুটি-রুজির জন্য গাড়ি চালান ইমন।

ইমন বলেন, সারাদিন ভাড়া তুললে ৮০০-৯০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু আমি নিজের জন্য আয় করি বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত। এ সময়ে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে নিজে চলি এবং সংসার চালাই।

ছেলের এমন কাজে অনেক খুশি ইমনের বাবা বাবলা মিয়া (৪৩)। ছেলেকে এ কাজে উৎসাহ দেন তিনি। এ নিয়ে অনেক সন্তুষ্ট বাবা-ছেলে।

ইমনের বাবা বাবলা মিয়া বলেন, আমাদের বাপ-বেটার সংসার। নিজে ঠেলাগাড়ি চালাই, ছেলে দিনে ফ্রি সার্ভিস দেয় আর রাতে আয় করে। এ আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলে সংসার। আমাদের চাওয়া-পাওয়ার নেই। এভাবে চলতে পারলেই শুকরিয়া।

ইমন বলেন, আমার বাবা আমাকে উৎসাহ দেন। সংসারে অভাব আছে তাই বলে মানবসেবা বন্ধ থাকবে না। বাবা বলেছেন কিছুদিন পর আরেকটা গাড়ি কিনলে আর অভাব থাকবে না। তবে আমরা এখন যেমন আছি অনেক ভালো আছি। বাবা আর আমার সংসার। মা মারা যাওয়ার পর বাবা আর বিয়ে করেননি। এখন বাবাই আমার মা-বাবা।

কমলগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র) রমুজ মিয়া বলেন, কয়েক মাস ধরে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন ইজিবাইক চালক ইমন। একজন ইজিবাইক চালকের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার। তার কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আসলে বড় লোক হওয়া লাগে না। উদার মন মানসিকতা থাকলেই মানুষের সেবা করা যায়। ছেলেটির জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।