Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পতাকা উত্সবে হতে পারে জেল-জরিমানা

সিউল, ১০ জুন ২০১৪:

আগামী বৃহস্পতিবার ব্রাজিলে শুরু হতে যাচ্ছে ২০তম ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী এক মাস গোটা দুনিয়া ডুবে থাকবে ফুটবলে। বিশেষ করে দুই লাতিন ‘ফুটবল দৈত্য’ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় ভাগ হয়ে যাবে গোটা বিশ্ব। বিশ্বকাপ উন্মাদনার রেণু উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশেও। রাস্তাঘাট, দোকানপাট সব আড্ডাতেই এখন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, কখনোবা স্পেন-জার্মানি। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই লাখ লাখ পতাকায় ছেয়ে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। কিন্তু এমন ফুটবল প্রেমেও যে হতে পারে জেল-জরিমানা। কেননা সংবিধান অনুসারে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্য কোনো দেশের পতাকা খুবই সীমিত পরিসরে উড়ানোর বিধান রয়েছে। এ বিধান লঙ্ঘন করলে জেল-জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে ফুটবলপ্রেমীদের!

chardike-ad

বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনসুলেট অফিসে সে দেশের পতাকা উড়ানো যাবে। রাষ্ট্রদূত বা মিশনের প্রধান তার অফিশিয়াল বাসভবন ও গাড়িতে নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন।

Gaffargaon-pic-1বিধিমালায় আরো বলা আছে— বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা বাংলাদেশ সফর করলে তাদের গাড়িতে নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জাতীয় দিবসের মতো দিনে কূটনৈতিক মিশন, মিশনপ্রধানের বাসভবন ও কনসুলেট অফিসের বাইরে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে সেখানে বিদেশী পতাকা ওড়ানো যাবে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে ওড়াতে হবে। বাংলাদেশের বেলায় যারা এমন সুবিধা দেয়, সেই দেশগুলো এসব নির্দিষ্ট স্থানে তাদের নিজ দেশের পতাকা ওড়াতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোথাও বিদেশী পতাকা ওড়াতে চাইলে সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

সারা বছর বিদেশী পতাকা তেমনটি না দেখা গেলেও ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই এ বিধান লঙ্ঘিত হয়। প্রায় প্রতিটি ভবনেই বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। কে কত বড় পতাকা টাঙাবেন তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তবে এ-সম্পর্কিত বিধান অনেকেরই অজানা। বিধিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের পতাকার চেয়ে উঁচুতে অন্য কোনো পতাকা উড়ানো যাবে না। আর দুই বা ততোধিক পতাকা টাঙাতে হলে আলাদা দণ্ডে পাশাপাশি বসাতে হবে। আর পতাকার আকার হতে হবে প্রায় সমান। তিনটি পতাকা উড়ানোর প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা থাকবে মাঝখানে।
বিদেশী পতাকা ওড়ানো শুধু সীমিতই করা হয়নি, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক অধ্যাদেশ অনুযায়ী কেউ এর কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২০১০ সালে আইনটির সংশোধনীতে এ বিধান যুক্ত করা হয়। এ অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার গেজেটের মাধ্যমে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ মোহাম্মদ ইজাজ রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আইনটিতে বিদেশী পতাকার ব্যবহারবিধি ও তা লঙ্ঘনের শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে। এর বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে আইন অনুযায়ীই বিচার করবেন আদালত, সেক্ষেত্রে শাস্তি হবে যদি না আইনটি পরিবর্তন করা হয়। অথবা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে (যেমন বিশ্বকাপ চলাকালে) পতাকা ওড়ানোর অনুমতি দিলে আইন অনুযায়ী তা বৈধতা পাবে।’

বিশ্বকাপের আনন্দে নিজ বাসায় ব্রাজিলের পতাকা টাঙিয়েছেন শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন নিলয়। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের খেলা ভালো লাগে, তাই পতাকা টাঙিয়েছি।’ তবে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন আছে কিনা তা জানা নেই তার।

চলতি বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালে এক দেশের নাগরিকদের জন্য অন্য দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে ফুটবল বিশ্বকাপে আরো বেশি পরিমাণে পতাকা ওড়ানো হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বিদেশী পতাকায় ছেয়ে গেছে গোটা দেশ। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা নেই। সূত্রঃ বণিক বার্তা ।