গত মার্চেও দলের কর্তৃত্ব নিয়ে আলোচনায় ছিলেন রওশন এরশাদ। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আর কোনো সাড়া নেই জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের। ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের রাজনীতিতে কার্যত অনুপস্থিত তিনি। তবে মৃত্যুর আগে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি দেখে যেতে চান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্যতম এই চরিত্র।
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর আগে ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে দেশে ও থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছেন রওশন এরশাদ। তবে আজও তাঁর শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর গুলশানের বাসার চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকেই দিন কাটছে তাঁর।
জাপার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন দম্পতির পুত্র রাহগীর আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) তাঁর চিকিৎসার বিষয়টি দেখাশোনা করছেন।
এর বাইরে রাজনৈতিক অনুসারীরা মাঝে মাঝে রওশন এরশাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে একাধিকবার সাদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মোবাইল ফোনে এমএমএস পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
জাপার রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ জানান, রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন রওশন এরশাদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হলে আওয়ামী লীগের অধীনে একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি সে সময় ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন রওশন। আর ‘অবমূল্যায়নের’ অভিযোগ তুলে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলেন তিনি।
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অধীনে বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অনেকেই মামলা-গ্রেপ্তারে বিপাকে থাকলেও রওশন এরশাদ ছিলেন অনেকটাই নিরাপদে, লোকচক্ষুর অন্তরালে। কিন্তু সম্প্রতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের আদালতে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রার্থী খালেদুজ্জামানকে তুলে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য সই নেন রওশন এরশাদের অনুসারীরা। অবশ্য এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।