২১ জুন ২০১৪:
আজ সেপ্টেম্বর ১১, ১৯১৭; আমার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। আমি এবং আরেক সহকর্মী ছাড়া বাকি সবাইকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তুমি বোধ হয় আগেই জেনেছ আমার এই করুণ পরিণতি সম্পর্কে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা শান্তির জন্য জীবন বিসর্জন দিতে রাজী। এখন ভোর ৬টা বাজে। কোন কিছুই থামানোর ক্ষমতা আমার হাতে নেই। আর আধঘন্টা পর আমাকে কলোঙ্গনে নিয়ে যাবে। কাল বুধবার ১২ তারিখ ঠিক রাত ৯টায় সামরিক বিচারে আমাকে মেরে ফেলা হবে। তোমাকে বিদায় দেয়ারও কোন সুযোগ পেলাম না। এই তরুণ বয়সে মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। কিন্তু জার্মান সামরিক বাহিনীর জন্য আমি যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। এটাই আমার শেষ কথা। আশা করি আমার লেখা তোমার এবং মার কাছে পৌঁছাবে।
ইতি তোমার সন্তান
আলবিন কবিস
মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে চিঠিটি লিখেছেন বিদ্রোহী নাবিক কবিস। জার্মান ইম্পেরিয়াল রণতরীর সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। জার্মানির কলোঙ্গনে বিশ জন নাবিকের সঙ্গে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছিল। হাত-পা-চোখ বেঁধে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
সূত্র: দি ইন্ডপেনডেন্ট।
বিদ্রোহ দমনে সুইডিশরাই আক্রমণ শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে যখন আলুর ব্যাপক উত্পাদন অব্যাহত ছিল তখন ব্রিটেনে উত্তর দিকের নৌবহর থেকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ ছিল। সে সময় জার্মান নাবিকদের অনেকেই ঠিকমতো খাবার পায়নি। ১৯১৭ সালের ৬ জুন নাবিকরা খাদ্য গ্রহণ থেকে পুরোপুরি বিরত থেকে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়। সরকারপক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হলেও সৈনিকরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। নাবিকদের কাউন্সিল থেকে খাবারের নিশ্চয়তার চেয়ে নৌবাহিনীর শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী ছিল বেশি। কবিস এবং তার ৪৬ জন সহকর্মী কাছাকাছি একটি রেল লাইনের পাশে মিটিং করেন। মিটিং-এর সংবাদটি গোপন থাকে না। ক্যাপ্টেন ভন হর্নহার্থ তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। কবিসসহ কমপক্ষে ১১ জন বিদ্রোহীদের আটক করা হয়েছিল। এই খবর পেয়ে ৬০০ জার্মান নাবিক আরও সৈনিকদের নিয়ে হাজির হয়েছিল আটককৃত মুক্তি এবং যুদ্ধ স্থগিত করার জন্য। তবে এতে কোন লাভ হয়নি। বিদ্রোহীদের ‘খুনী’ বলে ‘চিহ্নিত’ করে হত্যা করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিদ্রোহীদের স্মরনার্থে রাশিয়ার বার্লিনে আলবিন কবিসের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়। সূত্রঃ বণিকবার্তা।