৩ জুলাই ২০১৪:
রোজা মানেই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকা। আল্লাহ এ নির্দেশ দিয়েছেন শুধু ক্ষুধার কষ্ট উপলব্ধি করার জন্য নয়; একদল ইসলামিক চিন্তাবিদ, গবেষক, ডাক্তার মিলে আল্লাহর নির্দেশকে বিশ্লেষণ করে যেসব তথ্য পেয়েছেন সেগুলো হলো-
* রোজা রাখলে মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়; ফলে মানুষ সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত থাকে।
* রক্তনালিতে জমে থাকা উপাদানগুলো কমতে থাকে; ফলে হার্ট বস্নকের মতো ঝুঁকি কমে যায়।
* যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, তাদের জন্য সুখবর হলো রোজা মানুষের লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে চর্বি সরিয়ে দিয়ে মৃত্যুঝুঁকি কমায়।
* রোজা মানুষের পাকস্থলীকে পরিশুদ্ধ করে।
যারা অসুস্থ, ওষুধ সেবনের জন্য রোজা রাখতে পারেন না, তাদের জন্য ডাক্তারি পরামর্শ হলো, ওষুধ খাওয়ার সময় পাল্টে ফেলতে হবে। রোগীরা যেসব ওষুধ সকালে খেতেন সেগুলো সেহরি খাওয়ার পর খাবেন এবং যেসব ওষুধ রাতে খেতেন সেগুলো ইফতারের পর খাবেন। প্রয়োজনে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে খেতে পারবেন। যেমন আলসারের রোগী সকালে ২০ মিলিগ্রামের ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ (সেকলো, লোসেকটিল) খেতেন, রোজার সময় সেহরির পর সে ৪০ মিলিগ্রামের ওমিপ্রাজল খেয়ে নেবেন।
যদি এমন হয়, রোজা থাকা অবস্থায় হঠাৎ জ্বর, বমি বা ডায়রিয়া শুরু হয়েছে, ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন; কিন্তু রোজাদার কিছুতেই রোজা ভাঙবে না। কষ্ট পাবে; কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করবে না। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মরক্কো শহরে ১৯৯৭ সালের জুনে একদল ইসলামিক চিন্তাবিদ, গবেষক, ডাক্তার, ফার্মাকোলজিস্ট এবং বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীরা মিলে কোরআন ও হাদিসের আলোকে কতগুলো সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা পালন করলে কষ্ট দূর হবে কিন্তু রোজা ভাঙবে না।
* কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগ, কান পাকা রোগ বা নাকের সমস্যায় ড্রপ দেয়া যাবে।
* শরীরে চুলকানি হলে ক্রিম বা সলিউশন দেয়া যাবে।
* প্রচন্ড জ্বরে বা ডায়রিয়ায় সাপোজিটরি দেয়া যাবে।
* বমি হলে বা অন্যান্য রোগ হলে প্রয়োজনে মাংসপেশিতে, শিরা পথে ইনজেকশন দেয়া যাবে; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই পুষ্টিকর উপাদান শিরাপথে দেয়া যাবে না।
* মাউথ ওয়াশ বা মাউথ স্প্রে ব্যবহার করা যাবে। গার্গল করা যাবে; কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে, উপাদানগুলো পাকস্থলীতে পৌঁছায়নি।
* প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন দেয়া যাবে, নেবুলাইজ করা যাবে অথবা ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে।
অসুস্থার কারণে রোজা রাখতে কষ্ট হলে রোজা ভেঙে পরবর্তী সময়ে কাফফারা রোজা রাখার বিধান ইসলামে আছে। রোজা মানুষের মনে যেমন শান্তি আনে, সংযম দেয়, অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনে, তেমনি শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে।
ডা. আনিস আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক, স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সেস