Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ায় রমজান পালন

মোহাম্মদ হোসাইন, ৬ জুলাই ২০১৪:

কোরিয়া কিংবা প্রবাস জীবনে ইসলামের মূল কাজগুলো পালন করা অনেক সময় কঠিন হয়। সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করার কারণে অনেকেই নামাজ রোজা বাদ দিয়ে দেন। কোরিয়ার পরিবেশে রমজানে মাসে রোজা রাখা এবং রোজা পবিত্রতা পালন করাও অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু এই পরিবেশেও নামাজ কিংবা রোজা রাখতে হবে। রমজানে রোজা রাখা আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন এবং সারাবছর ভাল থাকার জন্য ট্রেনিং হিসেবে আমাদের কাছে রমজান মাসকে উপহার দিয়েছেন।

chardike-ad

‘মুসলিম’ মানে হচ্ছে-আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, তাঁর হুকুমের আনুগত্য করা, তাঁর দ্বীনের পথে অবিচল থাকা। যেখানে-যে অবস্থায় থাকুক না কেন, একজন মুসলিম তাঁর প্রভূর সন্তুষ্টির পথে চলার মধ্যে সে পরম শান্তি ও স্বস্তি পায়।

ramadan posterকিন্তু, নিজের প্রবৃত্তি ও আশপাশের প্রতিকূল পরিবেশ তাকে সহজে এটা করতে দেয়না। জীবন চলার বিভিন্ন ধাপে-ধাপে নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ইসলামি জীবন-যাপন করা একটু কঠিনও বটে। এই জন্যেই ইসলামের প্রশিক্ষণ দরকার হয়। রমজান মাস হচ্ছে বান্দাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এই প্রশিক্ষণের মাস।

”হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আশা করা যায় তোমরা পবিত্রতা-আত্মসংযম-সৎগুণাবলী ( অর্থাৎ তাকওয়া ) অর্জন করতে পারো”। (সূরা বাকারা-১৮৩)

“রমজান মাস হলো সে মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মাঝে যে লোক এ মাস পাবে সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা সফররত অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গণনা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা করতে পার, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর”। (সুরা বাকারা-১৮৫)

এ মাসে সুবেহ-সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

”সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা বাকারা-১৮৭)

কেন পানাহার ও যৌনক্রিয়া সহ মানষের মৌলিক কিছু চাহিদা থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরত থাকতে বলা হয়েছে?
এর যথার্থতা বুঝতে হলে মানুষের কিছু সাধারণ প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন–

– মানুষের যাবতীয় পদস্খলনের প্রথম ও প্রধান কারণ তার প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তির অবাধ কামনা-বাসনা পূরণ, তার সৎ ও সফল হওয়ার পথে বাধা।
– তীব্র সুখাকাংখা যাবতীয় অস্থিরতা ও বিড়ম্বনার কারণ। প্রকৃতই-সুখী হতে হলে দুঃখকে সহ্য করার শক্তি থাকতে হয়, দুঃখের সাথে পরিচিত হতে হয়। তবেই সে সুখের মূল্য বুঝবে। দুঃখের পর যে সুখ আসে সেটাই তার জন্যে কল্যাণময়।
– সাধারণত মানুষের অপরাধ প্রবণ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ- খাদ্য, যৌন চাহিদা, আর আনন্দ-বিনোদন।

এবার মুসলিমদের প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দিই
– মায়ের অবদান ও মর্যাদা না বুঝলে মাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসা যায় না, অন্তরে দেশপ্রেম না থাকলে দেশের জন্যে অবদান রাখা যায় না। তেমনিভাবে, আল্লাহর অবদান ও মর্যাদা না বুঝলে এবং তাঁর জন্যে আন্তরিক ভালবাসা ও ভয় মনে না আসলে এবং তাঁর প্রতি মজবুত বিশ্বাস ও আনুগত্যের অভ্যাস না হলে সত্যিকার মুসলিম হওয়া যায় না। শুধুমাত্র কিছু উপদেশ কিংবা ভয় প্রদর্শন কিংবা কিছু আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় কাজ দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজের সন্তুষ্টি পরিত্যাগ করা- অথবা নিজের কস্ট ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর পথে অবিচল থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

-মুসলিম হিসেবে একজন মানুষকে জীবনের হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয়। অতীতের ভুল-ভ্রান্তির অনুশোচনাবোধ, ভবিষ্যতের করণীয় এবং বর্তমানে পরিকল্পনাভিত্তিক জীবনযাপন করতে তাকে বিচার করতে হয়।

রমজান মাস মানুষের প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করার ট্রেনিং দেয়, দুঃখের সাথে পরিচিত করায়, দুঃখ হজম করার প্রশিক্ষণ দেয়, অপরাধ চরিতার্থ করা দুরে থাক, মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অপরাধ প্রবণতার ভাইরাস দূর করে দেয়। নিজেকে ছোট, অক্ষম ও দুর্বল বলে প্রমাণ করায়। এ ছাড়া আত্মসংযম, সবর, কষ্টসহিষ্ণু, ত্যাগী, পরিশ্রমী, পরোপকারী ইত্যাদি গুণাবলী অর্জন করানোর মাধ্যমে তাকে বৃহত্তর মানবিক ও সামাজিক কর্তব্য পালনের যোগ্য করে তুলে।

এ সব প্রশিক্ষন পৃথিবীর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লাভ করা যায় না। রমজান আল্লাহ প্রদত্ত এক স্থায়ী প্রশিক্ষণের নাম।

লেখক- ইমাম, শিহুয়া মসজিদ, দক্ষিণ কোরিয়া।