ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কারণ রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘে পরপর দুটি ভোটে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রথমত, মস্কোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর উত্থাপন করা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এই প্রস্তাবটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হয়।
প্রস্তাবে রাশিয়াকে যুদ্ধের জন্য সরাসরি দায়ী করা হয় এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপীয় প্রস্তাবটি ৯৩ ভোটে পাস হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু বিরত থাকেনি, বরং সরাসরি রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি ও আরও ১১টি দেশ ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
পরবর্তীতে,যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া করা একটি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করা হয়। এতে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা ছিল না, শুধু যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এর পক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাবটি পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোটদানে বিরত থাকে। কারণ সংশোধনী প্রস্তাবটিতে ভেটো দেওয়া দরকার বলে মনে করে তারা।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব উত্থাপন করে, যেখানে শুধুমাত্র ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রাণহানির প্রতি শোক প্রকাশ ও দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের আনীত প্রস্তাবটি ১০ ভোটে পাস হয়, তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।
ফলে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেন প্রশ্নে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এতোদিনের মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন মতবিরোধ বিরল ঘটনা।
গত তিন বছরে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কারণ রাশিয়া সেখানে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে যেকোনও প্রস্তাব আটকে দিতে পারে।
এই কারণেই, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মূল আলোচনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে স্থানান্তরিত হয়েছে, যদিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক নয়, নিরাপত্তা পরিষদের মতো কার্যকর নয়।