Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভারতে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়েছে তসলিমা নাসরিন

ভারতে বসবাসের স্থায়ী ভিসা (রেসিডেন্ট পারমিট) পেয়েছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এনডিটিভিকে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

1377680214শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন তসলিমা। তারপর ভিসাপ্রাপ্তির ঘোষণা এলো। প্রায় কুড়ি মিনিটের বৈঠক নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও তসলিমা তার নিজের টুইটারে বলেছেন, ‘রাজনাথ আমাকে বলেছেন, আপনার অন্ধকার দিন খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।’ এর পরই রাতে তিনি টিভিকে ভিসা প্রাপ্তির কথা জানান। মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয় তসলিমা নাসরিনকে।

chardike-ad

ভারতে থাকার রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তসলিমা আবেদন জানালেও এর আগে তা বাতিল করে দেয়া হয়। আগে তিনি এক বছর করে আবাসিক ভিসা পেতেন। এবার কিছুদিন আগে তা নবায়নের পরিবর্তে দুই মাসের ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ দেয়া হয় তাকে। গত ৩১ জুলাই তার আগের পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়।

রাজনাথের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তসলিমা নিজেই টুইটারে বলেন, ভারতে থাকার জন্য ২০০৪ সাল থেকে তিনি রেসিডেন্ট পারমিট পেয়ে আসছেন। অর্থাত্ ভারতে থাকার জন্য ‘লং টার্ম এন্ট্রি ভিসা’ বা এক্স ভিসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই তা নবায়ন করাতে হয়। সেই মতো এবছরও জুন মাসে তিনি রেসিডেন্ট পারমিট নবায়নের আবেদন করেন। গত ১ আগস্ট থেকে ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শুরু হয়। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তে হতবাক তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘এটা আমার কল্পনার অতীত।’ যাই হোক, এরপর তসলিমা চেষ্টা করেন বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিজেপির সভাপতিও। এ কারণে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য রাজনাথ নিজেও গুরুত্বপূর্ণ।

শনিবার সাক্ষাতের পর টুইটারে তসলিমা জানান, ‘শনিবার বিকালেই আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে আমার হিন্দিতে লেখা বই ‘ও আন্ধেরে দিন’ বইটি উপহার দিয়েছি। বই গ্রহণের পর তিনি বলেছেন, আপকা আন্ধেরে দিন খতম হো জায়েগা।

বাংলাদেশে মৌলবাদবিরোধী ও নারীবাদী লেখালেখির কারণে কট্টর মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে ১৯৯৪ সাল থেকে গত দুদশকের নির্বাসনে কখনও আমেরিকা, ইউরোপ, কখনও ভারতে কাটিয়েছেন তসলিমা। তসলিমার ইচ্ছা, তিনি ভারতে, বিশেষ করে তার প্রিয় শহর কলকাতায় পাকাপাকি থাকবেন। কিন্তু তার লেখালেখি নিয়ে ওই শহরের সংখ্যালঘু মুসলমান নেতাদের একাংশের প্রবল আপত্তি, বিক্ষোভ, মারমুখী চেহারা নেয়ায় ২০০৭ সালে তাকে কলকাতাও ছাড়তে হয়।

এদিকে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপারসন ও সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজু শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লজ্জা’ লেখার পর কিছু গোঁড়ামির জন্য তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। ‘লজ্জা’র জন্য তসলিমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা। কিন্তু আমি বইটি পড়েছি। সেখানে ইসলামবিরোধী কোনো কথা নেই। বাবরি মসজিদের পতন হওয়ার পর বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ছবিও বইটিতে আছে। তসলিমাকে ভারতে বসবাসের স্থায়ী ভিসা দেয়া উচিত ভারত সরকারের।

তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয় ১৯৯৪-এর ৯ আগস্ট। এরপর সুইডেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, কলকাতা ঘুরে প্রায় বছর চারেক হলো দিল্লি তার ঠিকানা। চাইলেও বাংলাদেশে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তার যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। কিন্তু তসলিমা বলেছেন, ‘কুড়ি বছর পরেও তিনি এতটুকু হাল ছাড়তে রাজি নন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই আমি আবার পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চাই, বাংলাদেশে ফিরতে চাই!’ আর সেই অধিকার আদায় করার জন্যই এখনও নিয়ম করে কিছুদিন পর পরই মেয়াদ ফুরনো পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হাজিরা দেন তিনি। দূতাবাস তাকে বারবার ফিরিয়ে দেয়, লিখিতভাবে কখনও কিছু জানায়ও না কেন তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগের পর ১৯৯৮ সালে তসলিমা নাসরিন একবার বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ পান এবং মাস তিনেক থাকার পর মৌলবাদীদের চাপে তাকে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তসলিমার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, তখন সুইডেন তাকে সেদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। সুইডিশ পাসপোর্টে ভারতের রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে তসলিমা কলকাতায় থাকতে শুরু করেন। তার ভারতে পদার্পণের পর থেকেই ভারতীয় মুসলিম মৌলবাদীরা বোম্বে, হায়দরাবাদ ও কলকাতায় তার অবস্থানের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সালে কলকাতায় মুসলিম মৌলবাদীদের তাণ্ডবের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তসলিমাকে তার বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করে ও প্রাথমিকভাবে রাজস্থানে অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে রাজস্থান থেকে সরিয়ে দিল্লিতে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে যায়। ৭-৮ মাস অজ্ঞাতবাসের পর ভারত ত্যাগের শর্তে তসলিমার ভারতের রেসিডেন্সি ভিসার নবায়ন করে তাকে ভারত ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

২০০৮ সালে তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাসপোর্টের আবেদন করলে তার আবেদন যথারীতি প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন তসলিমা তার ইউরোপিয়ান পাসপোর্টে ‘বাংলাদেশ ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন নেই’ এই ছাপ মারতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন, এতেও প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি সাধারণ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন এবং তাতেও প্রত্যাখ্যাত হন। আর এ সবকিছুর পর ২০০৮ সালেই বাংলাদেশ সরকার তার ‘কালো তালিকা’য় তসলিমা নাসরিনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। খবরঃ দৈনিক বর্তমান।