মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার জানিয়েছেন, তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধ ‘যত দ্রুত সম্ভব’ শেষ করতে চান। মধ্যপ্রাচ্য সফরের পর এ বিষয়ে তার নিজস্ব বক্তব্য এবার তিনি প্রকাশ্যে আনলেন।
ট্রাম্প ছাড়া ইসরায়েলের অনেক আন্তর্জাতিক মিত্র ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রকাশ্যে মতবিরোধে গেছেন। নেতানিয়াহুর গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ, মানবিক সহায়তা স্থগিত এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা—এই সিদ্ধান্তগুলোকে সমর্থন করেননি তারা। তবে ট্রাম্প এখনও নেতানিয়াহুর ওপর প্রকাশ্যে কোনো চাপ দেননি।
ওয়াশিংটনের উদ্দেশে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি শিগগিরই ‘ভালো কোনো খবর’ আশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যে এটা থামানো যায় কি না। আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চাই পুরো পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব থেমে যাক।’
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা অ্যাক্সিওসকে জানান, গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ট্রাম্প হতাশ এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের কষ্টের ছবি দেখে তিনি মর্মাহত। তিনি সহকারীদের নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহুকে জানাতে—এই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।
তবে ইসরায়েল এখন গাজার পুরো ভূখণ্ড পুনর্দখলের পরিকল্পনা করছে এবং অধিকাংশ ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে এগোচ্ছে।
রোববার এক আইডিএফ কর্মকর্তা জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে তারা গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকা দখলে নেবে। তিনি বলেন, হামাসের সামরিক নেতৃত্ব প্রায় ধ্বংস হলেও মূল যুদ্ধবাহিনী এখনো সক্রিয়।
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, হামাসের ওপর চাপ বাড়ানো হলে গাজায় আটক বাকি ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় সহায়তা হবে। তবে বাস্তবে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির আলোচনা পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।
এদিকে রোববার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে হামাসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য একটি নতুন ব্যবস্থাপনা চালুর প্রচেষ্টা বড় ধাক্কা খায়। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নির্বাহী পরিচালক জেক উড পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
জিএইচএফ-ই এই নতুন ব্যবস্থাপনার পরিচালনা ও অর্থায়নের দায়িত্বে ছিল এবং এই সপ্তাহ থেকেই এর কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল।
উড এক বিবৃতিতে জানান, দুই মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তিনি জিএইচএফকে গাজার মানুষের জন্য একটি স্বাধীন মানবিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘তবে এখন পরিষ্কার, মানবতা, নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতার নীতিগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়—আর আমি এসব নীতি থেকে পিছিয়ে আসতে পারি না।’
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাও জিএইচএফ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সংস্থাটি কার্যত ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন ঘটাবে।
উডের পদত্যাগ এবং তার পেছনের কারণ জিএইচএফের প্রতি সাহায্য সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর আস্থা নষ্ট করেছে। এতে গাজায় সংস্থাটির কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে, এমনকি এর ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।