Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অসময়ের ঘুম তাড়ানোর দাওয়াই

ঘুম বিষয়ক ফিচার, আর্টিকেল, ব্লগ পোস্টগুলোতে কেবলই রাতের ঘুমটা ভালো করবার দাওয়াই! সন্দেহ নেই অনিদ্রায় ভোগা মানুষের সংখ্যাটা বেশ আশংকাজনক হারেই বাড়ছে। কিন্তু অসময়ের ঘুমে কাজকর্ম, পড়াশুনা গোল্লায় যেতে বসাদের দলটাও তো নেহায়েত ছোট নয়! সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, কর্মস্থলে ঘুমের কারনে একটি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্ষতি গড়ে ১ হাজার ৯৬৭ ইউএস ডলার! তরতাজা সকালে কিংবা কর্মব্যস্ত দুপুরে বলা নেই, কওয়া নেই হুটহাট যাদের ঘুম চলে আসে তারা একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন নীচের পরামর্শগুলোয়।

gordon-brown-sleeping (Custom)
কোন এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠকে আরামে ঘুমোচ্ছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। ছবিঃ গেটি ইমেজ।

দিনটা শুরু হোক গোসল দিয়ে…

chardike-ad

প্রতিরাতেই ঘুম ভালো হতে হবে এমন তো কোন আইন নেই! তাই বলে কি পরের দিনটা ঝিমিয়েই কাটাবেন? তারচেয়ে বরং সকাল সকাল কুসুম গরম পানিতে একটা গোসল দিয়ে ফেলুন। গা মোছার আগে হাতে-পায়ে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। কুসম গরম পানিটা শরীরে রক্ত চলাচলে গতি আনবে, হিম শীতল জলে শরীর হয়ে যাবে হালকা, ঝরঝরে। আর হ্যা, সাথে মনটাকেও চাঙ্গা করে নিতে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে দুয়েকটা পছন্দের গানও গেয়ে ফেলুন না!

অতঃপর একটি পুষ্টিকর নাস্তা!

চমৎকার একটা দিনের জন্য সাত সকালে ভালো একটা নাস্তার কোন বিকল্প হয় না। তবে ভারী কিছু খাওয়ার চেয়ে সবজি দিয়ে রুটি, সাথে কলা বা অন্য কোন ফল, একটু দই, সবশেষে এক কাপ চা অথবা কফি খেয়ে নিন। কেবল পেটটা না ভরে শরীরে ‘শক্তি’ও যোগাবে এমন যে কোন খাবারই বিকল্প হতে পারে। প্রয়োজনে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কার পরামর্শ নিন।

কাজের ফাঁকে একটু গান…listening_to_music_at_work

মানুষের আবেগকে নাড়া দিতে কিংবা মস্তিষ্কের কোষগুলো জাগিয়ে দিতে গানের তুলনা কমই হয়। অসময়ে অবসন্ন বোধ হলে প্রিয় কোন গান ছেড়ে নিজেও একটু গলা মেলান। রুমে অন্য কেউ থাকলে তো বটেই, একা হলেও হেডফোনে শুনলেই বেশী কাজে দেবে। শোনার ক্ষেত্রে অতো নিয়ম মানার দরকার নেই; হালকা, ধীরলয়ের ক্ল্যাসিক থেকে শুরু করে পপ, রক, জ্যাজ, হিপহপ…আপনার পছন্দটাই আসল!

সজাগ রাখুন চার ইন্দ্রিয়

montree_ghum
সম্প্রতি একটি সভায় এভাবেই ঘুমিয়ে কাটান বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী।

জিহ্বা সচল রাখতে চুইংগাম বেশ কার্যকর হতে পারে। নাকে তেল দিয়ে ঘুমনোর কথা হয়তো অনেক শুনে থাকবেন, তবে ঘুম বিষয়ক গবেষণা বলছে পুদিনা পাতার গন্ধযুক্ত তেল নাকি ঘুম তাড়াতেই সাহায্য করে! চোখে ক্লান্তি ভর করলে চোখ দুটো একটু বন্ধ করে বিশ্রাম দিন, বাইরের পরিবেশটা নয়নাভিরাম কিছু হলে জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন। ঘুম হানা দিতে পারে কানের ক্লান্তি থেকেও! তাই ঘুম পেলে কানের লতিটা একটু টিপে টিপে আলতো করে নীচের দিকে টানুন।

জাগিয়ে রাখুন শরীরটাকেও…

অফিস হোক আর ক্লাসই হোক, ঘুম পেলে একটু এ ঘর, ও ঘর হেটে আসুন। এক তলা থেকে অন্য তলায় যেতে হলে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। ক্যান্টিনে একটু ঢু মেরে আসতে পারেন, ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে হালকা পানির ঝাপটাও কাজে দেবে। ঘোরাঘুরির মধ্যে কারও সাথে দেখা হয়ে গেলে দু-চার মিনিট আলাপ করে নিন। সম্ভব হলে মিনিট দশেকের জন্য খোলা বাতাসে বেড়িয়ে আসুন।

প্রয়োজন হাত-পায়ের নড়াচড়া

বেশিক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে ক্লান্তি না আসাটাই বরং অস্বাভাবিক। এক-দু’ ঘণ্টা পরপর তাই আসন ছেড়ে উঠে হাত-পাগুলো নেড়েচেড়ে নিন। মাঝে মাঝে ঘাড়টাকেও একটু এপাশ-ওপাশ করুন। চেয়ারে বসে শব্দ করে পা নাচালেও অনেক সময় ঘুম তাড়ানোর কাজে দেয়।

একেবারেই পারছেন না? তাহলে চাবির ছড়াটা হাতে নিয়ে ঘুমোন!

জার্মানদের মধ্যে নাকি এমন অভ্যাসের খুব চল আছে। অফিসে কিংবা গাড়ি চালানোর সময় খুব ঘুম পেলে তাঁরা হাতে একটা চাবির ছড়া নিয়ে রাখেন। হাত থেকে সেটা পড়ে গেলেই তন্দ্রাটুকু ছুটে যাবে!

নো ‘এনার্জি ড্রিংক’!

এসব পানীয় ক্ষণিকের জন্য শরীরটা চাঙ্গা করবে ঠিকই, কিন্তু সুদূরপ্রসারী প্রভাবটা মোটেও ভালো কিছু হবে না। অনেকসময় রাতের ঘুমেরও বারোটা বেজে গিয়ে পরের দিনটাও নষ্ট করে দিতে পারে! তাই চটকদার শক্তিবর্ধক পানীয় দূরে সরিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে কুসুম গরম পানিতে একটা লেবু বা কমলা চিপে পান করুন। কোনরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরে শক্তি এনে দেবে!

মধ্যাহ্ন ভোজটা হালকা হোক

ঘুম ডেকে আনতে ভারী খাবারের ভূমিকা তো আর নতুন করে বর্ণনার কিছু নেই! দুপুরেও তাই যথাসম্ভব হালকা খেতে চেষ্টা করুন। খিদে পেলে একটু পরপর বাদাম চিবনো যেতে পারে। সম্ভব হলে সাথে টক দই বা আপেল রাখুন। এক গ্লাস বরফ শীতল পানি প্রায়ই ঘুমের ভাব দূর করতে সাহায্য করে।ঘুমটা

ছকে বাঁধুন খাওয়া-ঘুম!

early_to_bed_and_early_to_riseপ্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং একই সময়ে বিছানা ছাড়ার চেষ্টা করুন। একটা তরতাজা দিনের জন্য এরচেয়ে উত্তম দাওয়াই সম্ভবত আর হয় না। তাই যতো কষ্টই হোক, ঘুমের সময়টা রুটিনে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করুন। আর সম্ভব হলে তিন বেলার খাবারের মেন্যুটাও সুনির্দিষ্ট করে ফেলুন। প্রতিদিনই এক খাবার খেতে হবে তা নয়, তবে একটু সচেতন হলে সাত দিনের খাবারে পুষ্টিকর বৈচিত্র্য আনাটা মোটেও কঠিন কোন কাজ নয়! একটু গুগল করুন না, কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

অহেতুক অবসাদ, বিষণ্ণতা, কাজে অমনোযোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া এসবের জন্য অনেক সময় হরমোনের সমস্যাও দায়ী থাকে। তাই নিয়মের মধ্যে থেকেও কোন কাজ না হলে অবশ্যই দেরী না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তবে গুরুতর কোন সমস্যা বোধ না করলেও নিয়মিত মেডিকেল চেক আপ একটু সুস্থ-সুন্দর জীবনের কার্যকর সহায়ক হতে পারে।