বর্ষাকাল মানেই যখন-তখন বৃষ্টি। রিমঝিম বৃষ্টির দিনে ঘর থেকে বের হতে মন চায় না। ঘরে বসে অনেকেই ঝুম বৃষ্টি বেশ উপভোগ করেন। সঙ্গে গরম গরম উপাদেয় কিছু খাবার থাকলে তো কথাই নেই। চলুন জেনে নিই এমন কিছু পারফেক্ট খাবারের কথা, যেগুলো বৃষ্টিকে করে তোলে আরও উপভোগ্য।
খিচুড়ি: বৃষ্টি আর খিচুড়ি যেন একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দশকের পর দশক বাঙালির বৃষ্টি বিলাসের খাদ্যতালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে খিচুড়ি। সঙ্গে যদি থাকে ইলিশ ভাজা, বেগুন ভাজা তাহলে তো কথাই নেই। তবে ডিম ভাজা হলেও কিন্তু স্বাদটা কমবে না।
পাকোড়া: এরপরেই আসে চায়ের সঙ্গে সেরা সঙ্গী, পাকোড়া। বর্ষার দিনে পেঁয়াজ, আলু, ধনে পাতা বা কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে তৈরি মুচমুচে পাকোড়া যেন আড্ডাকে পূর্ণতা দেয়। গরম গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পাকোড়ার ঝাঁজে এক রকম ঘরোয়া উষ্ণতা পাওয়া যায়। যারা ভেজিটেরিয়ান তাদের জন্য মিক্সড ভেজিটেবল পাকোড়াও দারুণ একটা অপশন।
চা-কফি: রিমঝিম বৃষ্টির মাঝে চলতে পারে গরম গরম চা কিংবা কফি। সঙ্গে পেঁয়াজ, মরিচ, চানাচুর, সরিষার তেল দিয়ে মুড়ি মাখা থাকলে সময়টা আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। অনেকেই গ্রিন টি বা আদা চা পান করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। চায়ে রয়েছে অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে রাখে চনমনে।
চিকেন কর্ন স্যুপ: চিকেন কর্ন স্যুপ বা হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ বর্ষার হালকা ঠান্ডা কাটাতে সাহায্য করে। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, বর্ষাকালের এই স্যুপ শিশু ও বৃদ্ধ সবার জন্য উপযোগী। এতে যেমন প্রোটিন ও মিনারেল থাকে, তেমনি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সহায়তা করে।
চটপটি ও ফুচকা: যদিও চটপটি ও ফুচকা রাস্তায় খাওয়া হয় বেশি, কিন্তু আজকাল ঘরেও সহজ উপায়ে বানানো যায়। চাটপটির টক ঝাল মসলা ও সেদ্ধ মটরের ঘ্রাণ, সঙ্গে ফুচকার খোসা এই দুইয়ের মেলবন্ধন বর্ষাকালীন বিকেলকে করে তোলে স্মরণীয়। বিশেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে এই খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।
আলুর চপ ও ডালপুরি: বৃষ্টিভেজা বিকেলে পেঁয়াজ-মরিচ-মশলা মিশিয়ে তৈরি আলুর চপ কিংবা ডালপুরির স্বাদই আলাদা। এক কাপ চায়ের সঙ্গে এই চপ বা পুরি খাওয়ার আনন্দ অনেকটা যেন শৈশবে ফিরে যাওয়ার মতো। অনেক পরিবারেই বর্ষার ছুটির দিনে এসব খাবার রান্না হয় গল্পের ছলে।
জিলাপি কিংবা রসমালাই: বর্ষার দিনে শুধুই ঝাল নয়, একটুখানি মিষ্টির ছোঁয়া থাকলেও মন্দ হয় না। গরম জিলাপি কিংবা ঠান্ডা রসগোল্লা যেকোনো একটি বৃষ্টিভেজা বিকেলকে করে তোলে সম্পূর্ণ। ঝুম বৃষ্টির মাঝে জানালার পাশে বসে চায়ের সঙ্গে এক টুকরো জিলাপি চিবিয়ে খাওয়ার অনুভূতি একেবারে ক্লাসিক।
নুডলস: রিমঝিম বৃষ্টিতে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে। এমন আবহাওয়ায় স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা চান কেউ কেউ। স্বাদের ভিন্নতা আনতে বৃষ্টির দিনে ঝটপট রান্না করে ফেলতে পারেন নুডলস। তবে বৃষ্টির দিনে ঝোল করা নুডলস বেশি ভালো লাগতে পারে। নুডলসের সঙ্গে ডিম, পেঁয়াজ, টমেটো আর ধনেপাতা মেশালে স্বাদ যেমন বাড়ে, তেমনি গন্ধটাও হয় জিবে জল আনার মতো। আর নুডলস ঝটপট করা যায়। এই আবহাওয়ায় তা পেটের জন্যও ভালো।
পপকর্ন: বৃষ্টির দিনে পপকর্ন হতে পারে সময় কাটানোর জন্য হালকা নাশতা। চায়ের সঙ্গে নাশতা হিসেবে পপকর্ন খেতে পারেন। সিনেমা দেখতে বসে বা পার্কে সময় কাটাতে গিয়ে পপকর্ন খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। তরুণ প্রজন্মের কাছে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। ভুট্টা থেকে তৈরি হয় পপকর্ন। আর এই শস্যে আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণ বেশি। পাশাপাশি আছে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।
হালিম: ফ্রিজ থেকে নামিয়ে নিন মুরগি আর মোড়ের দোকান থেকে আনিয়ে নিন হালিম মসলা। তারপর সহজেই বানিয়ে ফেলুন চিকেন হালিম। পরিচিত এই খাবারটি যেমন মুখরোচক, তেমনি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। বারান্দায় চেয়ারে বসে হালিম খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা।
সব মিলিয়ে বর্ষায় একটু ভিন্ন রকম খাওয়া দাওয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকে বিশেষ এক অনুভব। কখনো হয় সেটা মায়ের হাতের খিচুড়ি, কখনো বন্ধুর হাতে বানানো পাকোড়া, কখনো আবার স্রেফ নিজের হাতের তৈরি চিড়াভর্তা। খাবারের মাঝেই যেন বৃষ্টির দিনে পাওয়া যায় শান্তির ছোঁয়া। তাই বর্ষাকালে শুধু বৃষ্টির সৌন্দর্য নয়, বরং সেই সঙ্গে খাবারের প্লেটেও আসুক কিছু মুখরোচক স্বাদের ছোঁয়া।