বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১১, ২০২৫
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৩৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

এই শীতে সুপারফুড বিটরুট যে কারণে খাবেন


beetroot cover

অসাধারণ ‘সুপারফুড’ বিটরুট

বিটরুটকে বলা হয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ‘জিপ ফাইল’। শীতকালে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীর উষ্ণ রাখা জরুরি, তখন এই সবজিটি হয়ে ওঠে এক অসাধারণ ‘সুপারফুড’। এতে ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি ভরপুর থাকে। এর সঙ্গে ফাইবার বা আঁশ ও শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তো আছেই।
এই শীতে সুস্থ ও চনমনে থাকার জন্য বিটরুটের ছয়টি বিশেষ উপকারিতা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

হৃদযন্ত্রকে রক্ষা করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট পাওয়া যায়। এই নাইট্রেট আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালিকে শিথিল ও প্রসারিত রাখতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুণ কার্যকরী। সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উভয় ধরনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকায় হৃৎপিণ্ড হয় আরও শক্তিশালী এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। শীতকালে রক্তচাপের তারতম্য ঘটলে বিটরুট রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

কর্মক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধি করে
যারা নিয়মিত খেলাধুলা বা ব্যায়াম করেন, তারা বিটরুটের জুস খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। কারণ এতে থাকা নাইট্রেট শরীরের কোষে শক্তি উৎপাদক মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটের জুস শরীরের সহনশীলতা ও কার্ডিওরেসপিরেটরি (শ্বাসপ্রশ্বাসে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত) কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এটি ব্যায়ামের সময় শরীরে অক্সিজেন ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করে তোলে, যা শীতকালে শরীরকে উষ্ণ ও কর্মঠ রাখতে সহায়ক।

beetroot Inner

প্রদাহ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বেশির ভাগ রোগবালাইয়ের মূল কারণ হলো শরীরের অভ্যন্তরের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন। বিটরুট প্রাকৃতিকভাবেই অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণে ভরপুর। বিটের দারুণ গাঢ় লাল রঙের নেপথ্যে থাকা ‘বিটালেইন’ নামের রঞ্জক উপাদানটিতে শক্তিশালী প্রদাহরোধী উপাদান থাকে। নিয়মিত বিটরুট গ্রহণ করলে শরীরের রোজকার ছোটখাটো সমস্যাগুলো মারাত্মক প্রদাহের রূপ নিতে পারে না, ফলে শরীর ভেতর থেকে নীরোগ থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ওজন কমাতে যারা সচেতন, তাদের জন্য বিটরুট একটি চমৎকার খাবার। ১০০ গ্রাম সেদ্ধ বিটে মাত্র ৪৪ ক্যালরি, ১ দশমিক ৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। অর্থাৎ, সেদ্ধ বিটরুট খেলে আপনি প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি পাবেন, কিন্তু ক্যালরি থাকবে খুবই কম। এতে পুষ্টি ঠিকঠাকমতো পাওয়া যায় এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য অপরিহার্য।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ভালো হজম প্রক্রিয়া এবং সুস্থ লিভারের জন্য ফাইবার বা আঁশ অত্যন্ত জরুরি, যা বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিটরুট শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে দেয়, ফলে অন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে। পাশাপাশি, বিটরুটের রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। প্রচুর পরিশ্রমের পর শরীরে সারা দিন শক্তি স্থিতিশীল রাখতে বিটরুট খাওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

মস্তিষ্ক সুস্থ ও সবল রাখে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। বিটরুট মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। অর্থাৎ, বিটরুট মস্তিষ্ক সুস্থ ও সক্রিয় রাখতেও দারুণ কার্যকর।
উল্লেখ্য, বিটরুট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে এতে প্রচুর অক্সালেট আছে। ফলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। আপনি কি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে সপ্তাহে অল্প করে দু-তিনবার বিটরুট খেতে পারেন। সেদ্ধ করে খেলে ৮০ শতাংশ অক্সালেট দূর হয়ে যায়। পালংশাক, বাদাম ইত্যাদির সঙ্গে বিটরুট খাবেন না।