শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
সেতু ইসরাত লাইফস্টাইল ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:২৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

‘লাল সোনা’ রোজেলা! যে কারণে এই সুপার ড্রিঙ্ক আপনার কিচেনে থাকা জরুরি


rosella-tea

রোজেলা হলো ভিটামিন সি-এর একটি পাওয়ার হাউজ

ফ্লাস্ক থেকে ধোঁয়া ওঠা কফি মগ অথবা চায়ের কাপে চুমুক—সকাল বা বিকালের এই অভ্যাসটা আমাদের বহুদিনের। কিন্তু এই আসক্তির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যখন উচ্চ রক্তচাপ বা অনিদ্রা হানা দেয়, তখনই দরকার পড়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্পের। সেই বিকল্পটিই হলো প্রকৃতির এক বিস্ময়কর উপহার— রোজেলা (Roselle), যা বাংলাদেশে চুকাই বা মেস্তা নামে পরিচিত। এর টকটকে লাল রঙ এবং টক-মিষ্টি স্বাদ একে দিয়েছে ‘লাল সোনা’র তকমা।

দীর্ঘদিনের ক্যাফেইন আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কেন আপনি রোজেলা বা হিবিস্কাস চা বেছে নেবেন?
সাধারণ চা বা কফিতে যেখানে উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে, সেখানে রোজেলা পানীয় হলো সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত। এটিই রোজেলাকে ক্যাফেইন আসক্তদের জন্য এক ধাপ এগিয়ে রাখে।

এছাড়াও, সাধারণ চা বা কফিতে পরিমিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও রোজেলা হলো অ্যান্থোসায়ানিন-এ ভরপুর— যা অত্যন্ত শক্তিশালী এক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। স্বাদের দিক থেকেও রোজেলা সাধারণ চায়ের কষা বা কফির তেতো স্বাদের বিপরীতে একটি আনন্দদায়ক প্রাকৃতিক টক-মিষ্টি স্বাদ প্রদান করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চা-কফি সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারলেও, রোজেলা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে প্রমাণিত।

rosella-tea-02

লাল সোনার’ ম্যাজিক্যাল স্বাস্থ্য উপকারিতা
রোজেলা বা চুকাই পানীয় কেবল সতেজতাই দেয় না, এর রয়েছে একাধিক পরীক্ষিত স্বাস্থ্যগত গুণ।
প্রথমত, এটিকে বলা চলে হৃদয়ের বন্ধু। রোজেলা চায়ের অন্যতম প্রধান গুণ হলো এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এটি খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে, যা আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধের ঝুঁকি কমায়।

দ্বিতীয়ত, এটি ডিটক্স এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী। রোজেলাতে থাকা ফাইবার এবং জৈব অ্যাসিড শরীরের মেটাবোলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ফ্যাট শোষণ রোধ করার পাশাপাশি এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করে, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় এটিকে একটি চমৎকার পানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

এছাড়াও, রোজেলা হলো ভিটামিন সি-এর একটি পাওয়ার হাউজ। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহু গুণ বেড়ে যায়, যার ফলে সর্দি-কাশি ও ফ্লু-এর মতো সংক্রমণ মোকাবিলায় এটি সাহায্য করে।

এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিনের প্রাচুর্য থাকার কারণে এটি শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং কিছু প্রকার ক্যান্সার-বিরোধী সুরক্ষা প্রদানেও ভূমিকা রাখতে পারে।

এছাড়াও, যেহেতু এটি সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত, তাই এটিকে সন্ধ্যায় পান করলেও আপনার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না— যা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ের ক্ষেত্রে প্রায়শই হয়। উল্টো এটি স্নায়ুকে শান্ত করে এবং রাতে গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, ফলে এটি আপনাকে এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রশান্তি এনে দেয়।

রোজেলা কোথায় পাবেন?
সাধারণত শীতকালে (অক্টোবর-জানুয়ারি) গ্রামীণ সবজি বাজার এবং কিছু শহুরে গ্রোসারি শপে এর তাজা ফলটি পাওয়া যায়। এছাড়াও সারা বছরই শুকনো পাতা বড় সুপারশপ, ভেষজ পণ্যের দোকান এবং অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে (যেমন দারাজ, চালডাল বা অর্গানিক ফুড সাইট) শুকনো রোজেলা ফুল বা ‘Hibiscus Tea’ নামে প্যাকেটজাত অবস্থায় খুঁজে নিতে পারেন।

১ মিনিটেই তৈরি করুন আপনার দিনের নতুন পানীয়
১. এক কাপ গরম পানির মধ্যে ১ থেকে ২ চা চামচ শুকনো রোজেলা ফুল দিন।
২. ৫-৭ মিনিট ঢেকে রেখে দিন, যাতে এর সব গুণ জলে মিশে যায়।
৩. ছেঁকে নিয়ে স্বাদমতো সামান্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে গরম গরম পান করুন। (ঠান্ডা খেতে চাইলে বরফ কুচি মেশান)

রোজেলা এখন শুধু একটি পানীয় নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের প্রতীক। আপনার কিচেনে এই ‘লাল সোনা’ যোগ করে দেখুন, পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন!

তবে গবেষণায় এর উপকারিতা প্রমাণিত হলেও, গর্ভবতী মহিলা বা যারা নির্দিষ্ট কোনো রোগের ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে নতুন কোনো ভেষজ পানীয় খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।