Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্কুলছাত্রী সীমা হত্যায় ১০ জনের ফাঁসি

hungলক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী স্মৃতি নাথ সীমাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার ১৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদ এ রায় দেন। জরিমানার টাকা সীমার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সীমার বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদহিতা গ্রামে। সে স্থানীয় প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবার নাম লক্ষ্মণ চন্দ্র দেবনাথ। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই রাতে আসামিরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে সীমাদের বাড়িতে ঢোকে। ডাকাতির একপর্যায়ে তারা সীমাকে গণধর্ষণ করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই সে মারা যায়।

chardike-ad

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হিরণ (২৪), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (২৩), দহরপাড়া গ্রামের মানিক (৩০), তালিতপুর গ্রামের রাশেদ (২৫), রুদ্রপুর গ্রামের সুমন (২০), একলাশপুর গ্রামের সোহেল (২৭), সুধারামের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের হেদায়েত উল্যা হেদু (৫০), চাটখিল উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের নুরনবী (২৭), সোনাইমুড়ি উপজেলার ধন্যপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন ওরফে রুবেল (১৯) ও লক্ষ্মীপুর সদরের শ্রীরামপুর গ্রামের নুর আলম ওরফে নুরু (২২)। এদের মধ্যে মানিক, রাশেদ, সুমন, সোহেল ও রুবেল পলাতক রয়েছে। অন্যরা লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে রয়েছে।গতকাল রায় ঘোষণার সময় মামলার ১৩ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সীমার পরিবার। সীমার মা মিনতি রানী বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এভাবে আর কোনো মাকে যেন তাঁর সন্তানকে হারাতে না হয়। আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, সীমা (১৩) মা-বাবার সঙ্গে বসুদহিতা গ্রামে দাদার বাড়িতে থাকত। তার দাদার নাম কৃষ্ণ লাল দেবনাথ (৬৫)। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১৪-১৫ জন মুখোশপরা সশস্ত্র ব্যক্তি সীমাদের বাড়িতে ঢোকে। তারা অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা কুপিয়ে কৃষ্ণ লাল দেবনাথ, তাঁর স্ত্রী গীতা রানী (৬০) ও সীমার চাচি মিনতী বালা দেবীকে (২৭) জখম করে। একপর্যায়ে তারা সীমাকে একটি কক্ষে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। এরপর স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে তারা চলে যায়।

ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর বাড়ির লোকজনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সীমা ও আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই সীমা মারা যায়। এ ঘটনায় পরদিন কৃষ্ণ লাল দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৪-১৫ জনকে আসামি করে ডাকাতি, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।

সদর থানা সূত্র জানায়, এ মামলায় চন্দ্রগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. বিল্লাল হোসেন গত বছরের ২৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে বিভিন্ন সময় ২০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সাতজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের পিপি জসিম উদ্দিন ও মিজানুর রহমান মুন্সি। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব, এ কে এম হুমায়ুন কবির ও মোরশেদ আলম। গতকাল রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আবদুল ওহাব বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে যাব।