Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস

songsodঅবশেষে জাতীয় সংসদে পাস হলো বহুল আলোচিত ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’।

এই বিল পাস বা সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ ফিরে পেল বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা। এখন বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর কার্যকর হবে।

chardike-ad

বুধবার সন্ধ্যায় বিলটি পাস করার জন্য সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা জনমত যাচাইয়ের জন্য ভোটে দেওয়া হলে তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর রাত ১০টা ৫০ মিনিটে কণ্ঠভোটে ও পরে বিভক্তি ভোটে পাস হয় ষোড়শ সংশোধন বিল।

বিল পাসের সময় অধিবেশনে সভাপতিত্বে করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী । সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এই সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিলে ‘অসদারচণ ও অসামর্থ্যের’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারপতিদের অপসারণের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ষোড়শ সংশোধনীর আলোকে তদন্ত ও প্রমাণ বিষয়ক আলাদা একটি আইন প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ সংশোধনীর ফলে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা ৪০ বছর পর আবার সংসদের হাতে ফিরল। এর আগে বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের জানুয়ারি পর্যন্ত তা বহাল ছিল।

সন্ধ্যায় বিল উত্থাপনের পর তা যাচাইয়ে নোটিশ দেন, সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, কাজী ফিরোজ রশিদ, আবু হোসেন বাবলা, জিয়াউদ্দিন বাবলু, রওশন আরা মান্না, হাজি সেলিম, মাঈন উদ্দিন খান বাদলসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

সংসদ সদস্যরা বিলটির বিষয়ে কেন নোটিশ দিয়েছেন তারও ব্যাখা দেন। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বিলটির ওপর আলোচনার জন্য নোটিশদাতার তিন মিনিট করে সুযোগ দেন।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘যেহেতেু এই বিলটি স্পর্শকাতর, বিচারকদের সম্মান, বিচার ব্যবস্থা এবং দেশের মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, সে কারণে এটা জনমত যাচাইয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘বিলটি পাসের আগে আরো যাচাইবাছাই করা প্রয়োজন। দেশে অনেক আইনজ্ঞ রয়েছেন, বিজ্ঞ বিচারপতি রয়েছেন, তাদের সমন্বয়ে বিলটিকে আরো নিখুঁত করা যায় কিনা এ জন্য এখনই পাস না করে আরো কিছুটা সময় নেওয়া যেতে পারে।’

মাঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘যারা সংবিধান রচনা করেছিলেন, তারা কেন শুরুতেই একটি ভুল করেছিলেন। সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বপ্রকার ক্ষমতা দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে অভিশংসন শব্দটি জুড়ে দেয়নি। এই বিলটি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূণর্, সেহেতু ধীরে-চিন্তা করা উচিৎ।’

হাজী সেলিম বলেন, ‘বিলটি বিচার বিভাগ সম্পর্কিত বলে এটা জনমত যাচাইয়ের জন্য আরো কিছুটা সময় দরকার।’

জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ‘এটা সংবিধান সংশোধনের একটি বিষয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিলটি আরো বহু আগে আনা উচিত ছিল। বিরোধী দল হিসেবে আমরা এটা সমর্থন করি। তবে তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। যেখানে রাষ্ট্রপতিই বিচারকদের নিয়োগ এবং তাদের চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা রাখে। সেখানে সংসদের হাতে আনা কতটা জরুরি তা ভাবতে হবে। তবে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ৯৬ অনুচ্ছেদের এই পরিবর্তন দরকার।’

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘যদি বিলটি সমর্থন করি, তাহলে বলবে সরকারকে অনুসমর্থন করা হচ্ছে। আর যদি বলি বিলটি মানি না, এর জন্য হরতাল করি, ওয়াক আউট করি, গাড়ি পোড়াই, তাহলে কেউ কেউ বলবে, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের ভূমিকা। কিন্তু আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তায় এবং নীতিতে চলি। যে কারণে এই বিলেও আমাদের নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন থাকবে।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের জন্য জনমত যাচাইয়ে সংসদের মতামত চান। এতে জনমত যাচাইয়ে না জয়যুক্ত হলেও বিরোধী দলের অনেক নেতা যাচাইয়ের জন্য হ্যাঁ বলেন। ওই দলে রওশন এরশাদ এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও হাত উঁচিয়ে হ্যাঁ বলেন।

বিলটি যাচাইয়ে জনমতে দিতে হ্যাঁ বলেছিলেন হাজী সেলিমও। তবে পরে তিনি দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চান। পরে বিলটি কণ্ঠভোট ও বিভক্তিভোটে পাস হয়।’

গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ সংসদে উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদীয় কমিটি দুটি বৈঠকের পর বিল নিয়ে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন রোববার সংসদে উপস্থাপন করে।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর পর এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে যায়।

চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।