
প্রতিদিন সকালে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষ দিনের শুরুতে যে পানীয়টির দিকে হাত বাড়ান, তা হলো এক কাপ কফি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, আপনার এই ক্যাফেইনের যোগান কোথা থেকে আসে?
প্রতি বছর ১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস—যা উৎসর্গ করা হয় বিশ্বের লাখো কৃষক, উৎপাদক, ব্যবসায়ী এবং বারিস্তা’দের প্রতি, যারা কফিকে মানুষের টেবিলে পৌঁছে দেন। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়, যা শুধু একটি পানীয় নয়; বরং বৈশ্বিক সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ।
ইথিওপিয়া থেকে বৈশ্বিক যাত্রা
কফির শিকড় পৌঁছে যায় নবম শতাব্দীতে, বর্তমান ইথিওপিয়ায়, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিতো কফি গাছ। সেখান থেকে এ পানীয় ছড়িয়ে পড়ে ইয়েমেনসহ আরব উপদ্বীপের অন্যান্য অঞ্চলে। ১৫শ শতকের মধ্যেই কফি চাষ ও প্রস্তুতি সে অঞ্চলের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যপথ ধরে কফি পৌঁছায় ইউরোপে ১৭শ শতকে। প্রথমে ইতালিতে জনপ্রিয়তা পায় এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে মহাদেশ জুড়ে। তখন থেকেই কফি হাউসগুলো ব্যবসা, আলোচনা ও সামাজিক আড্ডার কেন্দ্র হয়ে ওঠে—যা আজও বিদ্যমান।
কফি উৎপাদনের বিজ্ঞান
যা আমরা সাধারণত ‘কফি বিন’ বলে জানি, তা আসলে কফি চেরি নামের লাল ফলের বীজ। প্রতিটি ফলে থাকে দুটি বীজ। ফল পাকতে ও প্রথম ফসল দিতে একটি কফি গাছের লাগে তিন থেকে চার বছর। এরপর শুরু হয় সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, শুকানো এবং ভাজা—যার মধ্য দিয়ে তৈরি হয় কফির সুগন্ধি বিন।
অ্যারাবিকা বনাম রোবাস্টা
বিশ্বব্যাপী কফি উৎপাদনে প্রধানত দুটি প্রজাতি ব্যবহৃত হয়—অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা।
অ্যারাবিকা বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬০–৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। এর স্বাদ মসৃণ, সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সাধারণত উচ্চমানের হিসেবে ধরা হয়।
রোবাস্টা স্বাদে তীব্র ও তুলনামূলক তিক্ত। এতে ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি এবং এটি সহজে চাষযোগ্য ও রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় সাধারণত ইনস্ট্যান্ট কফিতে বেশি ব্যবহার করা হয়।
বিশ্বের শীর্ষ ৫ কফি উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে- ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়া।
শুধু পানীয় নয়, জীবিকার উৎস
আন্তর্জাতিক কফি দিবস কেবল কফির ঐতিহ্য উদযাপন নয়, বরং সেই কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অবদান স্মরণ করার দিন, যাদের জীবিকা নির্ভর করে এর ওপর। জলবায়ু পরিবর্তন, দাম ওঠানামা ও আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতির কারণে তাদের জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
প্রতিদিনের এক কাপ কফি আমাদের শুধু শক্তি দেয় না, মনে করিয়ে দেয় দীর্ঘ সেই যাত্রার গল্প—যা শুরু হয়েছিল ইথিওপিয়ার উঁচু ভূমি থেকে, পেরিয়ে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বন্দর, ইউরোপের কফি হাউস, আর এখন পৌঁছেছে ঢাকা, রোম কিংবা নিউইয়র্কের ব্যস্ত ক্যাফেতে।
যার প্রতি চুমুকে লুকিয়ে আছে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প।





































