বুধবার । ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
মাহবুব কিংশুক ফিচার ৭ অক্টোবর ২০২৫, ৫:৩২ অপরাহ্ন
শেয়ার

সবচেয়ে কম বয়সে পদার্থে নোবেলজয়ী কে এই লরেন্স ব্র্যাগ


Lawrence Bragg

বিজ্ঞানজগতের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যারা তরুণ বয়সেই পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছেন। তাদেরই একজন অস্ট্রেলিয়ার পদার্থবিদ উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগ। ১৯১৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি পিতা উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এক্স-রশ্মির মাধ্যমে ক্রিস্টালের গঠন বিশ্লেষণে তাদের যুগান্তকারী অবদানের জন্য নোবেল পান তারা।

১৮৯০ সালের ৩১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে জন্ম নেওয়া লরেন্স ব্র্যাগ শৈশব থেকেই বিজ্ঞানের পরিবেশে বড় হন। তাঁর পিতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। লরেন্স ব্র্যাগের বয়স যখন ১৯ তখন তার পরিবার গ্রেট ব্রিটেনে পাড়ি জমায়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন লরেন্স ব্র্যাগ। এখানেই শুরু হয় তার বৈজ্ঞানিক জীবনের উজ্জ্বল অধ্যায়।

জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স ফন লাউয়ের এক্স-রশ্মির ডিফ্র্যাকশন বা বিকিরণ প্যাটার্ন সম্পর্কিত আবিষ্কার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্র্যাগ পিতা-পুত্র নিজস্ব গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তাদের গবেষণায় লরেন্স ব্র্যাগ উদ্ভাবন করেন ‘ব্র্যাগ’স ল’’, যা এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য, আপতন কোণ এবং ক্রিস্টালের পরমাণু স্তরের দূরত্বের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এর ফলে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা ক্রিস্টালের অভ্যন্তরীণ পরমাণু বিন্যাস নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হন।

এই আবিষ্কার আধুনিক ক্রিস্টালোগ্রাফির ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির পথ খুলে দেয়—এমনকি ডিএনএ-র গঠন নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট।

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ব্র্যাগ দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা ও গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউশনে অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালের ১ জুলাই যুক্তরাজ্যের ইপসউইচে মারা যান লরেন্স ব্র্যাগ।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও উইলিয়াম লরেন্স ব্র্যাগের নাম আজও বিজ্ঞানচর্চার অনুপ্রেরণা। সর্বকনিষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী হিসেবে তিনি যেমন ইতিহাসে অমর, তেমনি তাঁর উদ্ভাবিত সূত্র এখনো আলো ছড়াচ্ছে বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায়।