ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের পাঠদানকারী দেশের সরকারি কলেজগুলো আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না। সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব কলেজ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সীমিত করার অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেসরকারি কলেজগুলো পরিচালনা করবে। ১৯৯২ সাল থেকে সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে বের করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়া হয়েছিল।
গত ২ অক্টোবর শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সীমিত করে আনার এ নির্দেশনাসহ মোট ৯ দফা নির্দেশনাসংবলিত ‘আনঅফিসিয়াল নোট’ জারি করেন। এর আগে ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাসচিব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
জারিকৃত নোটে ৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে : প্রত্যেক জেলায় বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; প্রযুক্তি, বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব প্রদান; রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের নকশা প্রকৃতিবান্ধব করা; বিদেশে চাকরির সুযোগ রয়েছে এমন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া ও ক্যাটারিংয়ের ওপর উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করা; টেলিভিশনে মানসম্পন্ন ক্লাস সম্প্রচার কার্যক্রম বৃদ্ধি; চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন; ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকায় বা আশপাশে জমি পাওয়া না গেলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে মাওয়ার দিকে জমি ক্রয় ও অসুস্থতার কারণে বর্তমান ভিসিকে বাদ দিয়ে আরেকজন নতুন ভিসি নিয়োগ এবং সমুদ্র সম্পদের ওপর জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এসব কলেজ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথারীতিই থাকবে।’
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো পরিচালনা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেয় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। শিক্ষকদের বেতন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদের বদলি, পদোন্নতি পদায়ন, পুরস্কার-তিরস্কারও করে এই মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব কলেজের কারিকুলাম ও পাঠ্য প্রণয়ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজগুলোর সার্বিক কার্যক্রম একই স্থান থেকে পরিচালিত না হওয়ায় এক ধরনের জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করছে।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে ওই বছরের ২৫ মার্চ একটি কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে প্রধান করে ১১ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন ও কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। কিন্তু কমিটি ৪ মাস পর রিপোর্ট পেশ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে না দিয়ে ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনাসহ মোট ১৬ দফা সুপারিশ করা হয়। ওই সব সুপারিশের আলোকেই পরে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।
বিভাগীয় পর্যায়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের কলেজগুলো পরিচালনার ভার ইতিপূর্বে ছিল। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর সব কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পায় এটি। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় ২ হাজার ৬০০ কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কলেজ রয়েছে ২৭৯টি। প্রধানমন্ত্রী এবার এই ২৬ শতাধিক কলেজের মধ্যে শুধু সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার পরামর্শ দেন।