রবিবার । ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৩৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

ভারতে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা


india-news

বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রামনারায়ণ বাঘেল (৩১)

জীবিকার তাগিদে নিজ রাজ্য ছত্তিশগড় থেকে কেরালায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তরুণ পরিযায়ী শ্রমিক রামনারায়ণ বাঘেল। কিন্তু সেই কর্মসংস্থানের খোঁজই শেষ পর্যন্ত তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো। বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে স্থানীয়দের নির্মম গণপিটুনিতে প্রাণ হারাতে হয়েছে ৩১ বছর বয়সী এই যুবককে।

নিহত রামনারায়ণ ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলার বাসিন্দা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি কাজের খোঁজে কেরালার পালাক্কাড় জেলায় যান। তবে স্থানীয়দের অমূলক সন্দেহ ও উগ্র সহিংসতার বলি হতে হয় তাকে।

ভালয়ার থানা পুলিশ জানায়, গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পালাক্কাড় জেলার আট্টাপল্লাম এলাকায় চুরির সন্দেহে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা রামনারায়ণকে আটক করেন। সেখানে তার পরিচয় জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে তাকে ‘বাংলাদেশি নাগরিক’ বলে ধরে নেওয়া হয় এবং শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। তবে পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে কোনো চোরাই মাল পাওয়া যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে এই সহিংসতার ভয়ংকর রূপ ধরা পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ধরে বারবার ‘বাংলাদেশি’ বলে সম্বোধন করছে। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি তার ভাষা ও গ্রামের নাম জানতে চাইলে রামনারায়ণ ঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার আগেই চারপাশ থেকে চিৎকার শুরু হয়— ‘তুমি বাংলাদেশি’। এরপরই শুরু হয় বেধড়ক মারধর।

এক পর্যায়ে অচেতন প্রায় রামনারায়ণ বলেন যে তার বোন তার গ্রামেই থাকেন, তখন ভিডিওকারী বিদ্রূপ করে বলেন, “তোমার বোনও বাংলাদেশি।” এই বলেই পুনরায় তাকে আক্রমণ করা হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রামনারায়ণের শরীরে ৮০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানান, মাথায় গুরুতর আঘাত, শরীরজুড়ে অসংখ্য ক্ষত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই তার মৃত্যুর মূল কারণ। মারধরের সময় তার বুক থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

ঘটনার পর কেরালা পুলিশ ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ (বিএনএস) অনুযায়ী মামলা দায়ের করে। ১৮ ডিসেম্বর আট্টাপল্লাম গ্রামের পাঁচ বাসিন্দা— মুরলি, প্রসাদ, অনু, বিপিন ও আনন্দনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিহত রামনারায়ণের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না।

রামনারায়ণের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। তার ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। নিহতের চাচাতো ভাই শশীকান্ত বাঘেল আক্ষেপ করে বলেন, “সে খুবই গরিব ছিল, শুধু দুমুঠো ভাতের জন্যই কেরালায় গিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশি সন্দেহে তাকে পিটিয়ে মারা হলো। পরিবারটি এখন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।” তিনি সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছত্তিশগড়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছত্তিশগড় সরকার সব পর্যায়ে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে।