চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আম্বিয়া খাতুনের বয়স এখন ১৩৪। দেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালালে হয়তবা তিনি হতে পারেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী।
তবে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর খবর অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ নারীর মৃত্যু হয়েছিল ১২২ বছরে। অন্যদিকে, ‘দ্য ইকুয়েডর টাইমস’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বয়স্ক নারী জাপানের মিসাও ওকাওয়া। চলতি ৬ মার্চে যিনি ১১৬তম জন্মদিন পার করেছেন।
ফলে এখন পর্যন্ত আমাদের চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আম্বিয়া খাতুনই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী বলে ধরে নেয়া যায়। এর কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় না করায় জোর দিয়ে এ কথা দাবি করা যায়না।
এলাকাবাসী জানান, এলাকার লোকজন যারা বুড়ো হয়ে মারা গেছেন তারা ছোট বেলায় আম্বিয়াকে যেমন দেখেছেন মৃত্যুর আগে আম্বিয়াকে তেমনই দেখেছেন।
আম্বিয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দেয়া জন্ম সনদ অনুযায়ী আম্বিয়ার বর্তমান বয়স ১৩৪ বছর। জন্ম তারিখ ২-২-১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ। কাগুজে বয়স ১শ’ ৩৪ বছর। তবে পরিবারের অন্য সদস্যদের দাবি আম্বিয়ার বয়স দেড়’শ বছর।
তিনি নিজ চোখে দেখেছেন ব্রিটিশ শাসন, ভারত বর্ষের শাসন, পাকিস্তান আমলের শাসন আর এখন দেখছেন ৪২ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন। বিধবা হয়েছেন বহু বছর আগে। তবে বয়স হয়েও পাননি বয়স্ক ভাতা আর বিধবা হয়ে পাননি বিধবা ভাতা কিংবা অন্য কোন ধরনের ভাতা।
শীর্ষ নিউজ এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সেই আম্বিয়ার না বলা কথাগুলো।
আম্বিয়া খাতুনের বাড়ি জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫ নং সদর ইউনিয়নের দোয়ালীয়া মিজি বাড়ি। স্বামী জিতু মুন্সী ঠিক কবে কতো সালে মারা গেছেন তার তারিখ মনে নেই। বাড়ির উঠানে বসে বয়স্ক একমাত্র পুত্রবধূর সামনে এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় আম্বিয়ার।
বাড়ির উঠানে একটি চেয়ারে বসে তিনি বলেন, বাবা পায়ে হেঁটে হজে গিয়েছিলো। সেখানেই মারা যান। এটা তিনি জানতে পারেন লোকমাধ্যমে। আর সেখানেই বাবাকে মাটি দেয়া হয়। বাবা মারা যাবার পার ব্রিটিশ আমলে কয়েক বছর বিয়ে হবে না বলে সরকারিভাবে একটি কথা উঠে। তখন আপন চাচা দায়িত্ব নিয়ে একই বাড়ির সম্পর্কীয় চাচাতো ভাই জিতু মুন্সী‘র সঙ্গে তার বিয়ে দেন। আর সেই তারিখটি খেয়াল না থাকলেও ধারণা করছেন সালটি সম্ভবত ১৮০০ সালের একেবারে শেষ বেলায় কিংবা বরাবর ১৯০০সালের শুরুর দিকে।
৮ সন্তানের জননী আম্বিয়ার স্বামী-ছেলে-মেয়ে- নাতি-নাতনি অনেকেই বয়স হয়ে অনেক আগে মারা গেছেন। ভাষাগত দিক দিয়ে কয়েক প্রজন্ম বলা হয়ে হলেও আম্বিয়ার ভাষায় নাতি-নাতির পুতি আবার পুতির ঘরের অনেকেই ইতিমধ্যে বয়স হয়ে মারা গেছেন। নুরুল ইসলাম নামের তার একটি ছেলে আর তিনি রয়ে গেছেন এখনো এই ধরণীতে। ছেলে বৃদ্ধ বয়সে এবারে হজ করেছেন।
জীবনের এতোগুলো বছর পার হবার পরেও আম্বিয়া এখনো চোখে দেখেন। দাঁত পড়েনি। সামনের পাটির দাঁত আঘাত পেয়ে হারিয়েছেন। গোসল করতে গিয়ে নিজের কাপড় নিজেই কাঁচেন। নিজের খাবার নিজে হাতেই খেতে পারেন।
পুত্রবধূ ও নাত বৌদের সামনে আম্বিয়া বলেন, অতীতের স্মৃতি তেমন একটা মনে নেই। তবে ছোট বেলায় বাড়ির সামনের মাঠে মাছ ধরতেন। সেই মাছগুলো এখন আর দেখা যায় না। বড় বড় কৈ, পুটি, শোল, বোয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি মাছ। স্মৃতি মনে করতে গিয়ে আরো বলেন, আমাদের সময় আম গাছে উঠে আম পাড়তাম, শৈশবের খেলাগুলোর কথা মনে পড়ে।
আবার এদেশে যখন কাবুলিওয়ালা এসেছে সেই কথাও মনে আছে। আর তেমন একটা কিছু মনে নেই।
পুত্রবধূ নুরুল ইসলামের স্ত্রী সামছুন্নাহার (৭০) বলেন, আমরা শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখি উনাকে যেমন দেখছি এখনো তিনি তেমনই আছেন। আমরা শুনে আসছি উনার বয়স কমপক্ষে দেড়’শ হবে। ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হলে সামছুন্নাহার বলেন, তিনি কোনো ধরনের সরকারি ভাতা পাননি। এতো বয়স হলেও পাননি বয়স্ক ভাতা।
আম্বিয়ার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার বলেন, আমরা শুনেছি উনার ১শ’ ৩৪ বছর হয়েছে। আর ভাতার বিষয়ে আগে কেউ জানায়নি। তবে এবারে যে ভাতা আগে আসবে সেটাই উনাকে দেয়া হবে।





































