চলতি বছর গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে দক্ষিণ কোরীয় ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। তবে সার্বিকভাবে স্যামসাং রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। স্যামসাংয়ের আগে রয়েছে শুধু ভক্সওয়াগন করপোরেশন। কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করে স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকস। খবর জিএসএমএরেনা।
সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই খাতটি থেকে আয়ের পরিমাণ কমেছে। মোবাইল ডিভাইস খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের অবস্থান এখন খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়ন খাতের কথা বিবেচনা করলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্যামসাংই উঠে আসছে ১ নম্বরে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেবায় ভিন্নতা আনতেই গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কোন কোন প্রতিষ্ঠান চলতি বছর আরঅ্যান্ডডি খাতে কী পরিমাণ ব্যয় করেছে, তার ওপর একটি গবেষণা চালায় স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকস। আর এ প্রতিবেদনেই বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্যামসাংয়ের আরঅ্যান্ডডি খাতে ব্যয়ের বিষয়টি উঠে আসে।
গত বছরও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি এ খাতে ব্যয় করে ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার। চলতি বছর খাতটিতে স্যামসাংয়ের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্যামসাংয়ের পরের অবস্থানেই রয়েছে মার্কিন মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা ইন্টেল। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে চলতি বছর ব্যয় করেছে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার। প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ বিশে রয়েছে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন। এ তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মাইক্রোসফট ও চতুর্দশ অবস্থানে মার্কিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন।
উল্লেখ্য, শীর্ষ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল আরঅ্যান্ডডি খাতে ব্যয়ের তালিকার শীর্ষ বিশেও নেই। স্ট্র্যাটেজি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বড় বিনিয়োগকারীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে অ্যাপলের নাম দেখা যায়নি। কিন্তু মোবাইল ডিভাইসের বাজারে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে অ্যাপল। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় না বাড়ালেও বর্তমানে স্যামসাংয়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, স্যামসাং নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাজার দখলের যে চেষ্টা করে, তাতে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চলতি বছর স্যামসাং বেশকিছু নতুন মোবাইল ডিভাইস বাজারে এনেছে। এর মধ্যে গ্যালাক্সি নোট এজ অন্যতম। বাজার দখলে এগিয়ে থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। ধারণা করা হচ্ছে, কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছর আরো নতুন প্রযুক্তির ডিভাইস বাজারে ছাড়বে। চলতি বছর গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় আগামী বছর ফল দিতে শুরু করবে। উল্লেখ্য, গত প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। মূলত মোবাইল ডিভাইস খাতে সুবিধা করতে না পারায় তাদের মুনাফা কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ অবস্থা থেকে উঠে আসতে বেশকিছু উদ্যোগ এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মোবাইল উত্পাদন কমিয়ে দেয়া ও ডিভাইসের দাম কমিয়ে আনা। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি এখন মাইক্রোপ্রসেসর খাতে বেশি মনোনিবেশের পরিকল্পনা করছে বলেও বেশ কিছু প্রতিবেদনে জানা যায়। তবে আরঅ্যান্ডডি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির জন্য আগামী সময়ে সুফল বয়ে আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বণিকবার্তা।