Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ওয়াশিংটনে ঘরহারাদের জীবন

washington‘সকালে উঠেই চিন্তা—আজ রাতে থাকব কোথায়? এমনও হয়েছে, রাত ১২টা পর্যন্ত আমরা বাইরে থাকতাম। একটু আশ্রয়ের জন্য একে-ওকে ফোন করতাম। কিন্তু কেউ আমাদের আশ্রয় দেয়নি।’ কথাগুলো বলছিলেন ওয়াশিংটনের ফিলানা হল।

এক বছর আগে এই ডিসেম্বর মাসে ওয়াশিংটনে তাঁর পরিবারের সদস্যদের থাকার মতো কোনো ঘর ছিল না। তিন বছরের সন্তান গার্বিয়েলকে নিয়ে এক শরণার্থীশিবিরে তাঁদের আশ্রয় মেলে। স্বামী ও সাত বছরের ছেলের কপালে তা-ও জুটল না। তারা আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়।

chardike-ad

চলতে থাকে এভাবেই। এ বছরের মার্চ মাসে পরিবারটির একসঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ওই পরিবারটির ঠাঁই মেলে ওয়াশিংটনের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। চার কামরার একটি বাড়ির এক কোনে থাকার জায়গা হয় তাঁদের। জীবন চলতে থাকে চেপেচুপে। রাত কাটে হতাশায়। তবু এখন একটু আশ্রয় মিলেছে। এর আগে ঘুমাতে হতো বন্ধুদের বসার ঘরের সোফায়।

ওয়াশিংটনের দাতব্য সংস্থা ডোরওয়েস ফর উইমেন অ্যান্ড ফ্যামিলির উন্নয়নবিষয়ক পরিচালক হেদার ওম্যালি বলেন, আশ্রয় পাওয়া এই পরিবারগুলোও এক ধরনের আশ্রয়হীন অবস্থায় থাকে। কারণ তাদের এমন সব বাড়িতে রাখা হয়, যেখানে কেবল একজন মানুষ বা ছোট্ট একটি পরিবার থাকতে পারে। সেখানে গাদাগাদি করে কয়েকটি পরিবার থাকে। জায়গা না থাকায় তারা ঘুমায় মেঝেতে, বাথটাবে এমনকি গাড়িতেও। তাদের সেই ঠিকানাও স্থায়ী হয় না। অনেকে জানে না যে সেখান থেকে পরে তাদের কোথায় যেতে হতে পারে।

কেবল জুন মাসে ওয়াশিংটনে এক দিনে গৃহহীন হয়েছে এক হাজার ৯০০ পরিবার। গত বছরের তুলনায় এই হার ১১ শতাংশ বেড়েছে। মেট্রোপলিটন ওয়াশিংটন কাউন্সিল অব গভর্নমেন্টের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৩০ জনে একজন গৃহহীন ছিল। ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর দ্য হোমলেস (এনসিএইচ) জানায়, গৃহহীন মানুষের এই সংখ্যা ঐতিহাসিক। এটি প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি লোক গৃহহীন বা নিরাশ্রয়ী।

৫২ বছরের দাউদ এমনই একজন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সদস্য। এখন আট মাস ধরে তিনি রান্নার কাজ করছেন। তিন বছর ধরে তিনি আশ্রয়হীন। ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে দাউদকে আশ্রয় নিতে হয়েছে বন্ধুদের লিভিং রুমে। সে সময়ের কথা মনে করে দাউদ বলেন, এভাবে আশ্রয় নেওয়া খুব কষ্টের। কারণ এতে করে নিজেকে জীবনে ব্যর্থ মনে হয়। যখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়, তখন মনে হয় আমি সমাজের অংশ নই। এমনকি মেয়ের বাবা হিসেবেও নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। সালেম স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতাত্ত্বিক ওয়াইভন ভিসিংয়ের, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চলা মন্দার কারণে বিভিন্ন পরিবারের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করে সামান্য বেতন পায়। এই অল্প বেতনে তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। ফলে কাজ করেও অনেকে ঘর ভাড়া জোগাড় করতে পারছেন না।

ওমেলির ভাষ্য, আর্লিংটনে তিন ঘরের একটি বাড়িতে থাকতে গেলে এক মাসের ভাড়া দিতে হয় দুই হাজার মার্কিন ডলার। আর এ জন্য একজনকে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তাকে ন্যূনতম ৭.২৫ মার্কিন ডলার আয় করতে হয়। যাতায়াত বা দিবাযত্নের ব্যাপার থাকলে খরচ আরও বাড়ে। ফলে মানুষ দরিদ্রই থেকে যায়। ওমেলি আরও বলেন, বসবাসের অযোগ্য জায়গায় থাকার কারণে শিশুদের বিকাশেও সমস্যা হয়। যেমন হলের ছেলে রিচার্ডের বিকাশের সমস্যা রয়েছে ।

আশ্রয়হীন বা সাময়িক আশ্রয়ে থাকা লোকজন নতুন ঘরের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন একটি বাড়ির। গাদাগাদি করে থাকা হল স্বপ্ন দেখেন এমন একটি বাড়ির, যার সামনে ও পেছনে আঙিনা থাকবে। সেখানে তিনি রান্না করতে পারবেন আনন্দে। এএফপি।