বাংলাদেশের উন্নয়নে বরাবরই অন্যতম অংশীদার হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ১৯৭৩ সালে এবং ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে কোরিয়ার দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয় । বানিজ্য ও বিনিয়োগ সুসংহত করতে ১৯৭৮ সালে কোরিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা ঢাকায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশ- কোরিয়া সম্পর্কের গৌরবোজ্জ্বল অতীত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, সত্তরের দশকে কোরিয়ান উদ্যোক্তারাই প্রথম ঢাকায় পোশাক কারখানা স্থাপন করতে শুরু করেন যাদের অনেকেই এখনও এ দেশে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বিশ্ববব্যাংকের একটি উন্নয়ন প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্পের আজকের এই অবস্থানের পিছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল দেয়ূ কর্পোরেশন নামক কোরিয়াভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের, যারা আশির দশকের শেষভাগে এদেশের অনুন্নত কারখানাগুলোতে আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল।
যেকোন ধরণের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে উল্লেখ করে দূতাবাস জানায় কোরিয়া সরকার কর্তৃক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রদত্ত ঋণপ্রাপ্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ বর্তমানে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
কোরিয়ায় বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ফলে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের সরবরাহ বিগত বছরগুলোতে অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক শক্তি উৎস, জাহাজ শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোর সার্বিক উন্নয়নে কোরিয়া সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। স্যামসাং ও এলজির মতো কোম্পানিগুলো এদেশে তাদের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত আরও প্রসারিত করছে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও এখন বাংলাদেশকে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থান বলে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে চট্টগ্রামে একটি কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা নির্মাণাধীন রয়েছে যা প্রাথমিকভাবে ১.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের গর্ব হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি যেখানে কোরিয়ার রয়েছে ঐতিহ্য ও সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস। কোরিয়ান শিল্পীদের প্রতিটি পরিবেশনাই জীবন ঘনিষ্ঠ উল্লেখ করে মন্ত্রী তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, এই আয়োজনসমূহ বাংলাদেশের জনগণকে কোরিয়ান সংস্কৃতির সেরা দিকগুলো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দেবে। বছরব্যাপী আয়োজনে দু’দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং পারস্পরিক সংস্কৃতির বিনিময় আরও সমৃদ্ধি লাভ করবে বলেও মি. লী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।