Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিটিসিএলের ১৭ গাড়ির ইঞ্জিন নেই তবুও পরিচালন ব্যয় আছে!

BTCLরাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) পরিবহন পুলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রয়েছে ৮৩টি। এর মধ্যে ১৭টি অচল। শুধু কাঠামোই পার্কিং লটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে; ইঞ্জিন নেই। তার পরও এসব গাড়ির জ্বালানি বাবদ প্রতি মাসে বড় অঙ্কের খরচ দেখাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। ব্যয় দেখানো হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাজেরো ভি৬ মডেলের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৩১৪৫) পরিবহন পুলে পড়ে আছে। পরিবহন পুলে থাকলেও এর ইঞ্জিন বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে আরেকটি এক্স ট্রায়েল জিপ গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫১৩২) ইঞ্জিনও। আরো যে গাড়িগুলোর ইঞ্জিন বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৬০৪, ঢাকা মেট্রো-ক-০২-২৯১২, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১৮৭৮৫ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৩১৪৩। অথচ এসব গাড়ির পরিচালন ব্যয় দেখানো হচ্ছে ঠিকই।

chardike-ad

বিটিসিএলের পরিবহন পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাহান আলী মোল্লা। সূত্রমতে, তিনি নিজের জন্য বরাদ্দ নেন একটি জিপ গাড়ি, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৩১৪৪। দাফতরিক কাজের বাইরে তার পরিবারের সদস্যরাও গাড়িটি ব্যবহার করতেন। গত বছরের নভেম্বরে এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সে সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন শাহজাহান আলী মোল্লার পরিবারের এক সদস্য। গাড়িটি না চললেও নেয়া হচ্ছে জ্বালানি খরচ। জ্বালানির পাশাপাশি এসব অচল গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদও অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। নিয়মিত ব্যবধানে টায়ার-টিউব পরিবর্তনের কথাও বলা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, গাড়ির ইঞ্জিন বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করা হবে। বিটিসিএলের কোনো কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত কিনা, খতিয়ে দেখা হবে তাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইঞ্জিন না থাকলেও এসব গাড়ি মেরামতের নামে বিটিসিএল কর্মকর্তাদের নামে বিলও পাস হয়েছে। এসব বিলে স্বাক্ষর রয়েছে বিটিসিএলের এমডি, সদস্য (প্রশাসন) ও পরিচালকের (স.প্র.২)। গাড়ির ব্যাটারি ও টায়ার-টিউব কিনতেও বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। গাড়ি মেরামতের নামে এরই মধ্যে ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আরো ১০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন আছে।

পরিবহন পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে এতে শাহজাহান আলী মোল্লার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাজেট বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করায় মন্ত্রণালয় থেকে দায়ের করা হয়েছে আরেকটি বিভাগীয় মামলা।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি শাহজাহান আলী মোল্লা। তবে শাহজাহান আলী মোল্লার অনিয়মের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বিটিসিএলের এমডি প্রকৌশলী মাহ্ফুজ উদ্দিন আহমেদ। জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিষয়ে তিনি বলেন, এসবও তদন্ত করে দেখা হবে।

বিটিসিএল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাধিকারের বাইরে গিয়ে গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তারই একাধিক গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই। বিটিসিএলের জনবল কাঠামো

অনুযায়ীও একটির বেশি গাড়ি ব্যবহারের কথা উল্লেখ নেই। বিটিসিএলের এমডির ব্যক্তিগত সহকারীরাও গাড়ি ব্যবহারের যোগ্য নয়। যদিও বিটিসিএলের কর্মকর্তারা একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন। চার-পাঁচটিও ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির এমডির নামেও দুটি গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন আরো দুটি। বিটিসিএলের পরিবহন পুলের এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে মিত্সুবিশি পাজেরো, নিশান এক্স ট্রায়েল, নিশান পেট্রোল, টয়োটা প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার।

বিটিসিএলের এমডি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাধিকারের বাইরে গিয়ে গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টি জানার পর অনেকের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। তার পরও বরাদ্দকৃত গাড়ির অপব্যবহার হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাধিকারের বাইরে গিয়ে তার গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে মাহ্ফুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বরাদ্দকৃত গাড়ি বাতিল করে দুটি গাড়ি আমার জিম্মায় রেখেছি, যাতে গাড়ির অপব্যবহার না হতে পারে।’ বণিকবার্তা।