Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু

istema

আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ইজতেমার প্রথম পর্বের মুসল্লিদের মতই সীমাহীন ভোগান্তি এবং জীবনের ঝুঁকির মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে আসা মুসল্লিরা ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন।

chardike-ad

টঙ্গীর তুরাগ তীরে তিন দিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়। আগামী রোববার ১৮ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমার।

এর আগে প্রথম পর্ব ৯ জানুয়ারি শুরু হয় এবং ১১ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর আজ দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে। মুসল্লিদের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে দেশের ৩৪ জেলার মুসল্লিরা যোগ দিচ্ছেন। এর জন্য ময়দানকে ৩৯ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই সব জেলার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে পৌঁছে গেছেন এবং মুসল্লিদের আসা আজও অব্যাহত আছে। পাশাপাশি ভারত, পাকিস্থানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরাও ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। বিদেশি মুসলমানদের জন্য বরাবরের মতো ময়দানের উত্তর পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি নিবাস।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের মধ্যে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ট্রেন, মিনিবাস, বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ ছোট ছোট যানবাহনে করে দীর্ঘ পথ হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসেন। অনেক সময় সরাসরি বাস আসতে না পারায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে হয় মুসল্লিদের। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবারের হরতালের কারলে মুসল্লিদের আসতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলে আসছে। এই অবরোধের মধ্যেই ৯ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হয়। অবরোধের মধ্যে ১১ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় তারা। তার মধ্যেও তাবলিগ জামায়াতের লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর।

ইজতেমার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমার দ্বিতীয় দফায় অংশ নিতে ইতিমধ্যেই লাখো মুসল্লি সেখানে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলার কিশোর, যুবক, বয়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণির মানুষ ইজতেমায় এসেছেন। অনেকে দীর্ঘ চল্লিশ বা ১২০ দিন ইসলামের দাওয়াত শেষ করে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ইজতেমা শেষে দেশ-বিদেশ ঘুরে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ বা ১২০ দিনের জন্য বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক শামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন।

বিশ্ব ইজতেমার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জিম্মাদার গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, দ্বিতীয় পর্বে রাজধানী ঢাকার আংশিক এলাকাসহ ৩৪ জেলার মুসল্লিরা যোগ দিচ্ছেন। ইজতেমা ময়দানকে ৩৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই সব জেলার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে পৌঁছে গেছেন এবং মুসল্লিদের আসা আজও অব্যাহত আছে।

দ্বিতীয় পর্বে ৩৪ জেলার মুসল্লি অংশ নিচ্ছেন-

দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ৩৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এর জন্য ময়দানকে ৩৯ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলা ও খিত্তাগুলো হচ্ছে- ১ ও ২ নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা, ৩ ও ৪ নং খিত্তায় ঢাকা, ৫ নং খিত্তায় কক্সবাজার, ৬ নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ৭ নং খিত্তায় পিরোজপুর, ৮নং খিত্তায় পটুয়াখালী, ৯/১ ও ৯/২ নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ১০/১ ও১০/২ নং খিত্তায় জামালপুর, ১১ নং খিত্তায় বরিশাল, ১২ নং খিত্তায় নেত্রকোনা, ১৩ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৪ নং খিত্তায় মেহেরপুর, ১৫ ঝিনাইদহ, ১৬, ১৭ ও ১৮ নং খিত্তায় ময়মনসিংহ, ১৯ নং খিত্তায় লক্ষ্মীপুর, ২০ নং খিত্তায় বি-বাড়িয়া, ২১ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ২২ নং খিত্তায় বগুড়া, ২৩ নং খিত্তায় পঞ্চগড়, ২৪ নং খিত্তায় চাপাইনবাবগঞ্জ, ২৫নং খিত্তায় নীলফামারী, ২৬নং খিত্তায় নোয়াখালী, ২৭ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৮ নং খিত্তায় পাবনা, ২৯নং খিত্তায় নওগাঁ, ৩০ ও ৩১ নং খিত্তায় মুন্সিগঞ্জ, ৩২নং খিত্তায় মাদারীপুর, ৩৩ নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ,৩৪ নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৩৫ নং খিত্তায় মাগুরা, ৩৬নং খিত্তায় কুষ্টিয়া, ৩৭নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৩৮নং খিত্তায় খুলনা ও ৩৯নং খিত্তায় মৌলভীবাজার জেলা।

বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা মাঠে সমবেত হয়েছেন। মুসল্লিদের ইজতেমা মাঠে আসা অব্যাহত রয়েছে। হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে মুসল্লিরা দিনের চেয়ে রাতে অধিক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসছেন।

ইজতেমার জিম্মাদার গিয়াস উদ্দিন জানান, দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের কর্মসূচিতে থাকছে আম ও খাসবয়ান, তালিম, দরছে কোরআন, দরছে হাদিস, কার গুজারি, নতুন জামাত তৈরি ও যৌতুকবিহীন বিয়ে।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে দেশের বৃহৎ জুমার নামাজ আদায় করা হবে। জুমার নামাজে উত্তরা মডেল টাউন, গাজীপুর ও টঙ্গীর আশপাশের এলাকার অগণিত মুসল্লি অংশনিবেন বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় কয়েক হাজার বেশি বিদেশী মেহমানসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমাস্থলে হাজির হয়েছেন। মুসল্লিদের ইজতেমামুখি এ ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরী মোনাজাতের আগ পযর্ন্ত।