Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অপুর ক্ষোভ, মৌসুমীর জবাব

OPU MOUSUMIসম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩’। এতে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। বিষয়টিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত পরশু নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন অপু বিশ্বাস। এ প্রসঙ্গে টকিজ কথা বলেছে দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে

অপুর প্রতিক্রিয়া

chardike-ad

আমি আজ ক্ষোভ প্রকাশ করেছি বলে আমার নামটা আসছে। দেবদাস উপন্যাসটি ঘিরে এ নিয়ে মোট ১২টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বিগত দিনে যে অভিনেত্রীরা পার্বতী চরিত্রে কাজ করেছেন, এমন পরিস্থিতিতে তারাও একইভাবে প্রতিবাদ জানাতেন। শরত্চন্দ্রের পার্বতীকে ভাঙার শক্তি, সাধ্য আমাদের কারো নেই। দেবদাস চলচ্চিত্রটি যতবার নির্মাণ করা হবে, ততবারই খাতা-কলমে অঙ্কের মতো গণনা করা হবে। চাষী নজরুল ইসলাম এ নিয়ে দুবার দেবদাস বানিয়েছেন। বিষয়টি এমন নয় যে, নির্মাতা এসে আমাকে বলেছেন, ‘ছবিতে তোমাকে পার্বতী চরিত্রে নিলাম, তুমি এ ছবির প্রধান নায়িকা।’ শরত্বাবুর চুনিলাল, চন্দ্রমুখী কিংবা পার্বতী কারা, এটা সবার জানা। প্রতিটি গল্পে একজন নায়ক, একজন নায়িকা থাকে। তাদের প্রধান ধরা হয়। কাহিনীর প্রয়োজনে সেখানে আরো অনেকেই থাকতে পারে। তাদের পার্শ্বচরিত্র বলা হয়। যাকে বাংলা ভাষায় বলে দ্বিতীয় নায়িকা বা দ্বিতীয় নায়ক। আমার ক্ষোভ বা কষ্টটা এখানে যে, আমি ব্যক্তি অপু বিশ্বাস এখনো সে ধরনের শিল্পী হিসেবে গণ্য হইনি যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাব। কিন্তু এ ছবির জন্য তো আমি অনেক কষ্ট করেছি, কোনো পারিশ্রমিক নেইনি। চাষী আঙ্কেল আমাকে বলেছেন, ‘আমি দেবদাস বানাব, তুই পার্বতী হবি।’ আমি উত্তরে বলেছিলাম, আমার স্বপ্নের চরিত্র এটি। আমাকে তিনি কাজের সুযোগ দিয়েছেন, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। সেই পার্বতীকে আমি অনেক আশা, স্বপ্ন, স্নেহ দিয়ে নিজের মতো করে লালন করেছি। আমার দুঃখটা এখানে যে, আজ যদি চন্দ্রমুখী চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার দেয়া হয়, তাহলে অতীতে যারা এ ছবিতে পাবর্তী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাদের পার্শ্বচরিত্রে ধরা হবে। ১৯৭৯ সালে দেবদাস ছবিতে উত্তর কুমার অভিনয় করেছিলেন চুনিলালের চরিত্রে। প্রধান নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উত্তম কুমার মহানায়ক বলে তাকে কিন্তু কেউ ছবির প্রধান অভিনেতা বলেনি।

আমি সব পার্বতীর হয়ে বলছি, পার্বতী প্রধান চরিত্র, পার্শ্বচরিত্র নয়। আমি পুরস্কার পেতে চাই না, আমার হয়তো সে যোগ্যতা হয়নি। তবে দর্শককে এটা জানাতে চাই। আজকে যদি পার্বতীকে পার্শ্বচরিত্রের বলা হয়, তাহলে কবরী ম্যাডামের চরিত্রও পার্শ্বচরিত্র। আজ যদি চাষী নজরুল ইসলাম বেঁচে থাকতেন, তাহলে এ ক্ষোভটা তিনিও প্রকাশ করতেন। মৃত্যুর দুদিন আগেও তিনি আমাকে পার্বতী নামেই ডেকে গেছেন। আমি তার এই চরিত্র, এই সিনেমার কোথাও একটু ভুল হতে দেব না। এ কারণেই আমার প্রতিবাদ।

মৌসুমী বলেন

অপু হয়তো অপুর মতো করেই বলেছে। ও আসলে আমাকে সরাসরি কিছু বলেনি। এ কারণে আমি একটু সন্দিহান যে, আসলেই ও এটা বলেছে কিনা। আর যদি বলেও থাকে, তাহলে ও হয়তো জানে না কিংবা স্টাডিই করেনি যে, চন্দ্রমুখী চরিত্রটা আসলে কি। আমাদের চেয়ে বড় অভিনেত্রীরা যদি এই চরিত্রে অভিনয় করে পুরস্কার পেয়ে থাকেন, আমাদের চেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি কিংবা বড় জাজমেন্ট পার হয়ে এসে তারা যদি এটাকে অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে সসম্মানে গ্রহণ করতে পারে, তাহলে আমি কেন পারব না, আমি কে? এটা তো একটা ঐতিহাসিক চরিত্র হয়ে গেছে। আমি তো এ চরিত্রকে ছোট করে দেখার কিছু দেখি না। কাজেই, অপু যদি বলেও থাকে, সেটা ওর নিজস্ব বক্তব্য। আর আমার আসলে নায়িকা চরিত্র নিয়ে মাথাব্যথা নেই। অভিনেত্রী বা শিল্পী হিসেবে আমি স্বীকৃতি পেয়েছি। নায়িকা হিসেবে সুন্দর একটি মেয়ে হয়ে আমি গাইতে পারি, নাচতে পারি, সুন্দর করে সাজগোজ করে দর্শকের মন জয় করতে পারি। সেটা আমি অনেক আগেই জয় করে ফেলেছি। দর্শক আমাকে সে রায় দিয়ে দিয়েছে। এজন্য আমার অ্যাওয়ার্ডের প্রয়োজন নেই। কিন্তু অভিনয় জীবনের ২০ বছর পেরিয়ে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও আমার মনে হয়েছে, আরো ভালো চরিত্রে কাজ করতে হবে আমাকে। অনেক চলচ্চিত্রে আমার অভিনয় দর্শকরা ভালো বলে রায় দিয়েছে। এটা আমার অনেক বড় পাওয়া।

তার পরও অনেক দিন ধরেই আমি জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছিলাম না। এ বছর এ ছবিটি জমা দেয়ার সময় স্বপ্ন ছিল, ভেবেছি পুরস্কার যদি পেয়ে যাই, তাহলে কত ভালো লাগবে। তার পর পুরস্কার পেয়ে মনে হলো, যে স্বপ্ন নিয়ে ছবিটা শুরু করেছিলাম, সেটা বোধহয় সঠিক ছিল। আমিও আমার পেজে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছি, সেখানে যতটা ইতিবাচকভাবে সম্ভব, নিজের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আর অপু হচ্ছে আমার জুনিয়র। ওকে আমি স্নেহ করি। সেজন্য বিষয়টা নিয়ে আমি ওকে সরাসরি কিছু বলতে চাই না। কারণ ওই একদিন বুঝবে, এ ধরনের উক্তি করা তার ঠিক হয়নি। আমার মনে হয় ইনফরমেশন পাওয়ার পর ও নিজেই দুঃখপ্রকাশ করবে। তার পরও যদি ওর মনে হয় লিখবে, সে লিখতে পারে, তাকে ওয়েলকাম। আমার দর্শক আছে, তারাই রায় দেবে, আমি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য কিনা।

অপু বিশ্বাস (ফেসবুক স্ট্যাটাস)

‘হলুদে ভরপুর এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২৫টি ক্যাটাগরির মাঝে এক ছবিতেই ১৭টি???? বাকি ছবিগুলো কি এতই দুর্বল, যে এক ছবিতেই এত পুরস্কারের ছড়া-ছড়ি???

দেবদাস ছবির প্রধান নায়িকা কে থাকে? সারা বিশ্ব জানে পার্বতী। কিন্তু এখন জানলাম চন্দ্রমুখী। মৌসুমী আপু অনেক ভালো কাজ করেন এবং দেবদাস ছবিতেও অনেক ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু দেবদাস ছবিতে পার্শ্ব অভিনেত্রী ছিল মৌসুমী আপু। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাচ্ছেন দেবদাস ছবিটির জন্য। দেবদাস ছবিটির প্রধান নায়িকা আমি। দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার পেলে সেটা আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু পাচ্ছেন মৌসুমী আপু। এমন বিচারক কমিটির কার্যক্রমে আমি হতাশ। এভাবে আর কত দিন? আমরা শিল্পীরা কি কোন দিন সঠিক মূল্যায়ন পাবো না????’ অপু বিশ্বাস।

আরিফা পারভীন জামান মৌসুমী (ফেসবুক স্ট্যাটাস)

সারাজীবন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি, সবার ভালো-মন্দ মিশানো কথাও শুনেছি… জীবনে মানুষকে অনেক রূপে আসতে যেতে দেখেছি, ভালোবাসাকে ঘৃণা আর ঘৃণাকে ভালোবাসায় বদলাতে দেখেছি অনেক কষ্ট পেয়েছি সামলেও নিয়েছি… এই ইন্ডাস্ট্রিকে যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি… থাক সেসব কথা… কিছু মানুষ থাকবে সিনেমাকে ধ্বংস করতে। যেমন এই ছবিটা (অপুর ফেসবুক পোস্ট) আমাকে ইনবক্স করা হয়, সারা রাত ভাবলাম চুপ থাকবো… কিন্তু এতে তো সাহস বাড়বে… আমাদের থেমে না থেকে আগে বাড়তে হবে…

অপু কে আমি যত দূর চিনি এমন স্ট্যাটাস সে কখনো দিতে পারে না… তার অজান্তে এটা পোস্ট হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস… অপু ফিল্মের জন্য কম কষ্ট করেনি ভালোবেসে ফেলেছে, সবাই যখন হাল ছেড়ে দিলো অপু তখনও হাল ছাড়েনি… যারা তাকে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে এমন অপপ্রচার করছেন ফিল্মকে ধ্বংস করছেন এবার থামুন… আর কত মিথ্যা… আমাকে নিয়ে তো আর কোনো খবর বাকি নাই মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা কথা লিখেন একবারও কি ভাবেন যে এতে দেশও নোংরা হয়… আসুন আর নোংরা না করি… আসুন সবাই মিলে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই…

বণিকবার্তার সৌজন্যে।