Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মুদ্রা পাচারের অভিনব ৬ কৌশল

takaহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে পাচারকারী চক্র। অভিনব ছয়টি পদ্ধতির মাধ্যমে জাল মুদ্রা পাচারের এসব ঘটনা ঘটে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত হয়েছে। পাচার হওয়া জাল মুদ্রার মধ্যে অধিকাংশই রুপি।

গত ৮ মাসে প্রায় ১০ কোটি জাল রুপি জব্দ করা হয়। আর এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে চারটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। এসব চক্র পাকিস্তান থেকে জাল রুপি কৌশলে নিয়ে আসে। আপাতত দেশের তিন সীমান্তে অবস্থিত এই চার চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

chardike-ad

সম্প্রতি জাল রুপি চক্রের সঙ্গে আঁতাত ও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পাকিস্তানি এক কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠায় দেশটির দূতাবাস। এই অবস্থায় জাল রুপি আসা ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে বিমানবন্দর কাস্টমস।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (চোরাচালান উত্তর) ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, বিমানবন্দরে জব্দকৃত জাল রুপির মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি মামলার সাত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশে জাল রুপির চারটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তবে, তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলা যাচ্ছে না। চক্রের সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে অনুমান করেন তিনি। বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৮ মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১০ কোটি জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।

এসব ঘটনায় বাহক ১০ জন পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৩০, আগস্ট মাসে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪ হাজার, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার, অক্টোবর মাসে ২ কোটি ৭৯ লাখ, নভেম্বর মাসে ২ কোটি ৯৫ লাখ, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাল রুপি উদ্ধার হয়নি। বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, পাকিস্তান এয়ারলাইনসের করাচি থেকে আসা ফ্লাইটগুলো থেকেই মূলত এই জাল রুপি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, যে হারে ও পদ্ধতিতে জাল রুপি আসছে তা বিবেচনায় আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পাকিস্তান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের ব্যক্তি ও মালামাল আমরা শতভাগ চেক করছি। বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাতে জাল রুপি যেন পাচার না হয় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ভারতে পাচারের উদ্দেশে শাহজালালকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক জাল নোট তৈরি চক্রই এই কাজ করছে। জাল ভারতীয় রুপিসহ যারা আটক হচ্ছেন তারা মূলত বাহক।

এদের গডফাদারদেরও আটক করা প্রয়োজন। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) তানজিনা আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। শুধুমাত্র বাহক আটক হওয়াতে মামলা শেষ হওয়ার কারণে এর পেছনে বা নেপথ্যে কারা রয়েছে তা উদঘাটন হচ্ছে না। নেপথ্যের ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনতে পারলে জাল রুপি পাচার পুরোপুরি বন্ধ হবে বলে মতামত দেন তিনি।

জাল রুপি আনার কৌশলঃ

কূটনৈতিক লাগেজ: গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, জাল রুপি বাংলাদেশে আনার জন্য পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ কূটনীতিক লাগেজ চেকিং এর আওতামুক্ত থাকার কারণে এই সুযোগটি নেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দারা বনানী এলাকা থেকে পাকিস্তানি কূটনৈতিক মাজাহার আটক হওয়ার পর বিষয়টি পুরো পরিস্কার হয়। গোয়েন্দাদের ধারণা তিনি যতবার পাকিস্তান আসা যাওয়া করেছেন ততবার বিপুল পরিমাণ জাল রুপি বাংলাদেশে এনেছেন।

ডিনার সেটের আড়ালে: বাংলাদেশে পাকিস্তানি ডিনার সেটের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সেই দেশ থেকেই ডিনার সেট আমদানি হয়। অথচ এই ডিনার সেটের ভেতরে কৌশলে জাল রুপি নিয়ে আসা হচ্ছে। সম্প্রতি জাল রুপিসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি নাগরিক আটক হওয়ার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় গোয়েন্দা সংস্থা।

দোলনার ভেতর: পাকিস্তান থেকে আসা শিশুদের খেলনার ভেতর করেও জাল রুপি আসছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান থেকে যেকোনো ধরণের খেলনা ব্যাপক তল্লাশি করছে।

বাহক দিয়ে পাচার: জাল ভারতীয় মুদ্রাসহ আটকৃতদের দেয়া তথ্য মতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেক বাঙ্গালি পাকিস্তানের করাচি থাকেন। এরা দীর্ঘদিন দেশে আসেন না। পাকিস্তানি চক্রটি ওই সব বাঙালিদের হাত করে তাদের দেশে আসার খরচ দেয়। তারা বলে দেশে বিমানবন্দরের বাইরে গেলে এক ব্যক্তি ফোন দেবে। আর তাকে জাল রুপির ব্যাগটি দিয়ে দিতে। অনেক সময় বাহকরা জানেনই না ব্যাগের মধ্যে আসলে কি আছে।

নতুন সিম: কিছু কিছু পদ্ধতি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় চক্রটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এটি হলো করাচি থেকে যে লোকের নিকট জাল রুপির ব্যাগ দেয়া হয় তাকে একেবারে বাংলাদেশের যেকোনো অপারেটরের নতুন সিম দেয়া হয়। তাকে শিখিয়ে দেয়া হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে আসার পর সিমটি চালু করতে। সিমটি চালু হলে একটি ফোন আসবে। ফোন করা ব্যক্তিকে ব্যাগটি দিয়ে দিতে। ইমরান নামের এক ব্যক্তিকে আটকের পর এই পদ্ধতিও ফাঁস হয়ে যায়। ১ লাখ জাল রুপিতে ৪০ হাজার টাকা: গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্য মতে জাল রুপিগুলো শাহজালাল থেকে নিরাপদে বাইরে আসার পর বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, যশোর এবং মেহেরপুর জেলার জালরুপি চক্র হয় ঢাকায় আসে নতুবা ঢাকার চক্র সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিয়ে আসে। এরপর তারা ১ লাখ জাল রুপিতে ভারতীয় চক্রের নিকট বাংলাদেশি টাকায় ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে। এভাবে এই চক্র মূলত বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে জাল রুপি পাচার করে আসছে।